দেশের তথ্য ডেস্ক:-
এক দফা কর্মসূচির মতো খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসায় একক কর্মসূচি দাবি
খালেদা জিয়ার কঠিন সময়ে মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে প্রশ্ন
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে দলের ভেতরে কঠার গোপনীয়তা, এড়িয়ে গণমাধ্যমও
নিবিড় পর্যবেক্ষণে বেগম খালেদা জিয়া। দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সব ধরনের ওষুধও প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের আর কিছুই করার নেই। এ নিয়ে বিএনপিতেও তৈরি হয়েছে গুমোট পরিস্থিতি। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ হাইকমান্ডের কেউ মুখ খুলছেন না।
গণমাধ্যমকেও এড়িয়ে চলছেন তারা। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতির সাত দিন পর দলটির তিন শীর্ষ নেতা বললেন, খালেদা জিয়া অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। কারাগারে বন্দি অবস্থায় তাদের নেত্রীকে ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। যার জন্য এখন তার শরীরে অন্য ওষুধ আর কাজ করছে না। কিংবা ওষুধ দেয়া হলে অন্য জটিলতা বেড়ে যাচ্ছে। যে কোনো সময় বিদেশ পাঠানো না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। খালেদা জিয়ার অসহায় অবস্থায় বিএনপিও অসহায় পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে মনে করছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
তারা অভিযোগ তুলে বলছেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ অন্য নেতারা বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করছেন; কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তি বা চিকিৎসা নিশ্চিতে কারাবন্দি থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ভূমিকাই পালন করতে পারেনি তারা। একক কর্মসূচিও গ্রহণ করতে পারেনি। খালেদা জিয়ার এই জটিল সময়ে দোয়া মাহফিল, মিলাদ মাহফিল করেই সময় ক্ষেপণ করছেন। ভোটের রাজনীতি ও নির্বাচনি স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মসূচির চিন্তা করছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার গুরুতর অবস্থা নিয়ে দলে সিরিয়াসনেস নেই।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির দুই সদস্য আমার সংবাদকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে জানান, দলের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যারা টেলিভিশন টকশোতে যান কিংবা প্রেস ক্লাব ডিআরইউকেন্দ্রিক নিয়মিত কর্মসূচিতে অতিথি হন তারা যেন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে কোনো কথা না বলেন। খালেদা জিয়ার বিষয়টি এখন দলে স্পর্শকাতর হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার পূর্ণ তথ্য যদি মাঠপর্যায়ে চলে যায় তাহলে তৃণমূল থেকে চাপ পড়বে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও একক কর্মসূচির জন্য দলে চাপ তৈরি হতে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে খালেদা জিয়ার জন্য এখন একক কর্মসূচি দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে; তাই খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপিও এখন অসহায় অবস্থায় রয়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় তিনি হাসপাতালে ভর্তি। লিভারের জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় পেটে পানি জমে গেছে। কিডনি ও হূদযন্ত্রের সমস্যাও জটিল হচ্ছে। ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসে, বমি হচ্ছে। দিনে একাধিকবার অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকেও বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত চিকিৎসা সংক্রান্ত খোঁজ নিচ্ছেন। তার শারীরিক জটিলতা অনুযায়ী বাংলাদেশে সব ধরনের চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট পেতে হলে দেশের বাইরে নেয়া আবশ্যক। চিকিৎসকরা উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখছেন না।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, লিভার ও কিডনি সমস্যা আরও জটিল হওয়ায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে তার চিকিৎসকরা শঙ্কিত। বিদেশে নেয়া ছাড়া এ দেশে ডাক্তারদের আর কিছুই করার নেই। গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এবারই রহস্যজনকভাবে তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে লুকোচুরি চলছে। কেউ প্রকাশ্যে কিছুই বলছেন না। খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের নীতিনির্ধারক সবাই এড়িয়ে চলছেন। বিএনপি ও দলীয় অঙ্গ সংগঠনের মাধ্যমে দোয়ার আয়োজন করে অস্পষ্ট বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি ভালো নেই শুধু এ টুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে।
এদিকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি চেয়ে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। বিএনপিও পরিবারের ওপর সব দায় দিয়ে রাজনৈতিক ভূমিকা থেকে কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন। পরিবার মুক্তির জন্য চেষ্টা করছে— এমন বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা আমার সংবাদকে বলেন, খালেদা জিয়া শুধু পরিবারের নয়, দলেরও বড় সম্পদ। এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি সুচিকিৎসা নিশ্চিতে একক বড় কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারনি বিএনপি। সরকার পতনে ঢাকায় যেসব কর্মসূচি পালন হয়েছে, মহাসমাবেশ, গণমিছিল এ কর্মসূচিগুলোর অন্তত কোনো একটি এককভাবে খালেদা জিয়ার ইস্যুতে করা উচিত ছিল কিন্তু বিএনপি করতে পারেনি। এই সরকার পতন যেমন জরুরি তেমনি খালেদা জিয়ার বিষয়েও কৃতজ্ঞ থাকা জরুরি। খালেদা জিয়ার এখন যে দুঃসময় চলছে, এখন দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা যেমন উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন তেমনি খালেদা জিয়ার চিকিৎসাও আবশ্যক। মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচির মতো খালেদা জিয়া ইস্যুতে ঢাকাসহ সারা দেশে কর্মসূচি দেয়া আবশ্যক। দোয়া মিলাদ, মাহফিল থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। অসুস্থ খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দলীয় কর্মসূচিতে এলে সেগুলোতে হবে দলে প্রাণসঞ্চার।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে বলেছেন, বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়া অসহায় অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তিনি বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সমস্ত অনৈতিক কাজ করছে। আজ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে আটক করে রেখেছে। অসহায় অবস্থায় তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া এখনো মুক্তি পাননি। সরকার তাকে তিলে তিলে মেরে ফেলার জন্য অনেক চেষ্টা করছে। তিনি চিকিৎসা নিতে পারেন না। খালেদা জিয়া যদি বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি না পান, বাংলাদেশের আর কেউ যেন বিদেশে চিকিৎসার জন্য না যান। সেটি সরকারের মন্ত্রী, এমপি কিংবা যে-ই হোক। খালেদা জিয়ার মুক্তি মানে জনগণের মুক্তি।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আমার সংবাদকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার এখন যে পরিস্থিতি তার জন্য দেশের কোটি কোটি মানুষ দোয়া করছেন। বাংলাদেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে ভালোবাসেন। খালেদা জিয়ার সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অসহায় অবস্থায় হাসপাতলে রয়েছেন। খালেদা জিয়ার বয়স হয়েছে তিনি অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত। হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বেড়ে গেছে। তিনি এমন একজন মানুষ যার জনপ্রিয়তার কোনো সীমা নেই। এই সরকার খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। চক্রান্ত করে, ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। বন্দি অবস্থায় খালেদা জিয়াকে ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কারাগারে তাকে যে ওষুধ দেয়া হয়েছে উপকারের চেয়ে খালেদা জিয়ার ক্ষতি বেশি হয়েছে। যার কারণে এখন অনেক ওষুধ তার শরীরে আর কাজ করছেন না। অনেক জটিলতা দেখা দিয়েছে। ডাক্তার বলে দিয়েছেন এমনিই তারা অবস্থা অবনতির মধ্যে রয়েছে , এটি যদি আরো বাড়ে তাহলে এখানকার চিকিৎসকদের আর কিছুই করার থাকবে না। কোনো উন্নতি আর সম্ভব নয়। আবেদনের পর আবেদন করা হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে তবুও সরকার সায় দিচ্ছে না। আমরা নেতাকর্মীরা বলছি সরকার আমাদের কথাও শুনছে না। বেগম খালেদা জিয়া অবশ্যই পালিয়ে যাওয়ার মতো মানুষ নয়। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক। তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক। যদি এর মধ্যে খালেদা জিয়ার কোনো অঘটন ঘটে তার জন্য সরকারকে পুরো দায় বহন করতে হবে। আমরা এই সরকারকে ক্ষমা করব না।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমার সংবাদকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া খুবই অসহায় অবস্থায় আছেন। তাকে তিলে তিলে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশের জনগণ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসবে। তিনি আবারো মুক্ত বাতাসে গণতন্ত্রের কথা বলবেন, মানুষের কথা বলবেন।’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল আমার সংবাদকে বলেন, ‘আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক আশঙ্কার খবর পাচ্ছি। আল্লাহ না করুক যদি খালেদা জিয়ার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এই সরকারকে দায় নিতে হবে।’