অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনা ঃ
“খুলনার কয়রায় মহারাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে শোক সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের বক্তব্যকালে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির মধ্যে বাক বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এসময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা এমপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, উস্কানি মুলক বক্তব্য দেবেন না। অনেক করেছেন। দলটার আর বারো বাজাবেন না।
এই ঘটনার ৩২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বুধবার কালনা আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সভায় এ ঘটনা ঘটে।
সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সভা মঞ্চ থেকে বক্তব্যের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের নাম ঘোষনা করলে তার অনুসারীরা স্লোগান দিতে শুরু করেন। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্লোগান বন্ধের আহবান জানান। কিন্তু তার আহবানে সাড়া না দিয়ে স্লোগান অব্যাহত রাখেন এমপির অনুসারীরা। পরবর্তীতে এমপির বক্তব্যকালে স্লোগানধারী তার অনুসারীদের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করেন। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রতিবাদ জানালে তাৎক্ষণিক স্থানীয় সংসদ সদস্য বক্তব্য শেষ করেন।
এ বিষয় বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ রয়েছে। সে কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের মনের শক্তি ফিরে পেতে সাতটি ইউনিয়নে শোক সভার আয়োজন করেছি। প্রোগ্রাম গুলো দেখে জনগন বুঝবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এক। এখানে কেউ কারোর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
কিন্তু, উনি (এমপি) প্রোগ্রামে বারবার দশ বারোটা ছেলে নিয়ে যান। উনি(এমপি) যখন বক্তব্য দেন তখন ওই ছেলে গুলো শুধু স্লোগান দেয়। জেলার সিনিয়র নেতাকর্মীদের বক্তব্যের সময় ওই ছেলে গুলো স্লোগান দেয় না। তাহলে দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের অপমান করা হয় এই ব্যাপারটা এমপি সাহেব বুঝতে চাননা।
গতকালকের প্রোগ্রামের সময় স্বল্পতার কারণে আমিও তিন মিনিটের বেশী বক্তব্য দিতে পারিনি। বক্তৃতার জন্য এমপির নাম ঘোষনার সময় তার অনুসারী দশ বারোটা ছেলে স্লোগান শুরু করলে আমি নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা আমার কথা না শুনে স্লোগান দিতে থাকে। এমপির বক্তব্যে উস্কানি মুলক বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। এসময় আমি প্রতিবাদ করি।
জি এম মোহসিন রেজা আরও বলেন, এমপি হচ্ছে দলের ফসল। নেত্রী বরাদ্দ দিলে পূর্বে আমরা দেখেছি দলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের নিয়ে বসে আলোচনা করে নেন। কিন্তু উনি (এমপি) ঘরে বসে বসে তার অনুসারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করেন। কোথায় উন্নয়ন করেছেন আমরা জানি না। উনি এমপি হয়েছেন দলের কারণে ব্যক্তিগত কারণে না।
টিআর, কাবিখা, কাবিটা, পানির ট্যাংক ও টিউবওয়েল কোথায় দিচ্ছেন তাও আমরা জানি না। এসব বিক্রি করে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবেন আর দলের নেতাকর্মীদের ভিক্ষা করে খেতে হবে।
শোক সভায় উপস্থিত থাকা খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডঃ সোহরাব আলী সানা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আগামী সংসদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ করতে কয়রায় উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সাতটি ইউনিয়নে শোক সভা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাঁচটি ইউনিয়নে শোক সভা সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি প্রোগ্রামে স্থানীয় সংসদ সদস্য তার কিছু অনুসারী নিয়ে আসেন। তারা শুধু এমপি সাহেবের বক্তব্যের সময় স্লোগান দেয়। জেলার আর কোন নেতার সময় তারা থাকে না। এটা দলের জন্য বিব্রতকর।
এবিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু’র ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।