খবর প্রতিবেদনঃ-
সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) জাতীয় পার্টির প্যাডে গণমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান রওশন। এতে বলা হয়, দলের কো চেয়ারম্যানদের অনুরোধে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু যেসব কো-চেয়ারম্যান অনুরোধের কথা বলা হচ্ছে- তারা এই বিষয়ে কোনও কিছুই জানেন না।জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তার ছোট ভাই জিএম কাদের। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের মধ্যে।ভারত সরকারের আমন্ত্রণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) বর্তমানে দেশটিতে অবস্থান করছেন। চিকিৎসা শেষে কিছুদিন আগে দেশে ফেরেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। দেশে এসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে নির্বাচন সংক্রান্ত আলাপ আলোচনা করেন। সেই বৈঠক নিয়ে জাপার ভেতরে বাইরে যখন নানা গুঞ্জন চলছিল তখন দেবর জিএম কাদেরকে সরিয়ে নিজেই দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন রওশন এরশাদ। সংখ্যাগরিষ্ঠ কো চেয়ারম্যানদের পূর্বে নেওয়া সিদ্ধান্তের আলোকে পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি আসন্ন দশম জাতীয় সম্মেলন পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানানো হয়েছে।রওশন এরশাদের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির ৪ জন কো-চেয়ারম্যান ও ২ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য এক সভায় অংশ নেন। সেখানে দলের কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও নাসরিন জাহান রত্না উপস্থিত ছিলেন।কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, মামলা মোকদ্দমায় জাতীয় পার্টির চলমান অচলাবস্থা নিরসনে রওশন এরশাদকে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানানো হয় সভায়। দলের ক্রান্তিকাল মোকাবিলায় তাকে অস্থায়ী ভিত্তিতে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবেও মনোনীত করা হয়।জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ অপর এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমি কখনও রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করি নাই। এক বছর, দুই বছর আগের কোনো স্বাক্ষরকে কেন্দ্র করে এই ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই।
এর আগে ২০২১ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে এরিক এরশাদ রওশন এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে সে বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এই খবর ভুয়া। আমাদের দলের গঠনতন্ত্রে এইভাবে কারও চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘যাদের স্বাক্ষর করার কথা বলা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলছে, তাদেরকে ব্লাকমেইল করা হয়েছে। গত বছর রওশন এরশাদ চিকিৎসা শেষে যখন দেশে এসেছিল তাকে দেখতে গিয়েছিলেন, তখন এসব স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল। কোনো সভায় তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেনি।’
নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণার বিষয়ে জানতে রওশন এরশাদকে একাধিকাবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেনি।