ফাঁসকৃত প্রশ্নে দিয়ে মেডিকেল পরীক্ষায় ১১তম হন লামিয়া।

sk-khl-21082023-05.jpg

মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও ফাঁসকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়ার অভিযোগে খুলনা থেকে ৫ চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা হলো ডাঃ মোঃ ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম (৪০), ডাঃ লুইস সৌরভ সরকার (৩০), ডাঃ মুসতাহিন হাসান লামিয়া (২৫), ডাঃ শর্মিষ্ঠা মন্ডল (২৬) ও ডাঃ নাজিয়া মেহজাবিন তিশা (২৪)। এর আগে সাতজন গ্রেফতারসহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এ নিয়ে ১২ জন চিকিৎসক গ্রেফতার হলেন। তাদের মধ্যে চিকিৎসক শর্মিষ্ঠা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক। অন্যরা বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন।
অন্যদিকে খুলনার মেডিকেল ভর্তি কোচিং ‘থ্রি ডক্টরস’-এর উপদেষ্টা ডাঃ মো ইউনুসজ্জামান খান তারিম স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। প্রায় দেড় যুগ ধরে তিনি মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা।এর আগে সোমবার দুপুরে খুলনার চার চিকিৎসক সিআইডির কাছে কেন, জানতে চেয়ে পরিবারের করা সাংবাদিক সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই সন্ধ্যায় তাদের গ্রেফতারের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানায় পুলিশের বিশেষায়িত এ তদন্ত সংস্থাটি।

 

জানা গেছে, গ্রেফতার ডাঃ মোঃ ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম চিকিৎসা সেবা বাদ দিয়ে কোচিং ব্যবসায় জড়ান। খুলনা শহরের থ্রি ডক্টরস নামে মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে নিজেকে চিকিৎসক তৈরির কারিগর হিসেবে পরিচয় দিলেও আসলে তিনি মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত-শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি ও তার স্ত্রীর একাউন্টে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। হাসপাতাল, ফ্ল্যাট, জমি, মাছের ঘের ও হোটেল শেয়ারসহ হয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক।
এছাড়াও গ্রেফতারকৃত ডাঃ মুসতাহিন হাসান লামিয়া, ডাঃ শর্মিষ্ঠা মন্ডল ও ডাঃ নাজিয়া মেহজাবিন তিশা থ্রি ডক্টরস নামে মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা ২০১৫-১৬ সেশনে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেলে চান্স পান। এর মধ্যে লামিয়া মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন করে। তাকে বাসায় প্রাইভেটও পড়াতেন ডাঃ তারিম। এর আগে গত ২০২০ সালের জুলাই মাসে জসিম উদ্দিন ও অক্টোবর মাসে আবদুস সালাম নামে দু’জনকে মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিরপুর থানায় মামলা হয়। তার তদন্তে নেমেই মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চলতি বছরের গত ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্টের মধ্যে ৭ চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
মেডিকেল শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রেস স্টাফ আব্দুস সালাম ও তার চাচাতো ভাই জসিম উদ্দিন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশ্নফাঁস চক্র গড়ে তোলে। স¤প্রতি গ্রেফতারকৃত ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদেই এই ৫ জনের নাম বেরিয়ে আসে। এরই মধ্যে ৫ জনকে ১৮ আগস্ট হেফাজতে নিলেও সিআইডি বিষয়টি এতোদিন স্বীকার করেনি।
সিআইডির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদেই এদের বিষয়ে জানা যায় ও তাদের সিআইডি হেফাজতে নেয়া হয়। গ্রেফতারকৃত ডাঃ ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা পেশা বাদ দিয়ে থ্রি ডক্টরস নামে মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার গড়ে তোলেন। তিনি নিজেকে চিকিৎসক তৈরির কারিগর হিসেবে পরিচয় দিলেও মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত-শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তারিম ও তার স্ত্রীর একাউন্টে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে।
ডাঃ লুইস সৌরভ সরকার খুলনা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরস-এর শিক্ষক। বর্তমানে একটি বেসরকারী এনজিওতে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকলেও প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিল সে।
এদিকে গত ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জনকারী ডাঃ মুসতাহিন হাসান লামিয়া খুলনা থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক তারিমের স্পেশাল ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়াও তাকে বাসায়ও পড়াতো সে (তারিম)। কম মেধাবী হওয়ার পরও তারিমের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে তিনি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। তারিমের ঘনিষ্ঠজন ও তৎকালীন কোচিংয়ের ৩ জন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়ার পরও সে ৪টি ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় সব বিষয়েই ফেল করেছে। পরবর্তীতে একাধিকবারের চেষ্টায় সে পাশ করেছে।
লামিয়ার প্রশ্ন পেয়ে চান্স পাওয়ার বিষয়টি খুলনার চিকিৎসক মহলে ওপেন সিক্রেট। লামিয়ার ভর্তি জন্য তার স্বামী শেখ ওসমান গনি ও ডাঃ তারিমের মাঝে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া ডাঃ শর্মিষ্ঠা মন্ডল ও ডাঃ নাজিয়া মেহজাবিন তিশা উভয়েই ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তারিমের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র ক্রয় করে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। গ্রেফতার ব্যক্তিদেরকে মিরপুর মডেল থানার অধীনে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Share this post

PinIt
scroll to top