এবার দেশের গ্রিডে যুক্ত হতে যাচ্ছে জলবিদ্যুৎ, আদানির পর আসছে নেপালের বিদ্যুৎ।।।

electrick-.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:- 

ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের পর বিশ্ববাজারে বেড়ে গেছে জ্বালানির দাম। দেশেও তৈরি হয় ডলার সংকট। ফলে বিদ্যুৎ খাতে কয়লা, তেল, গ্যাসের বিকল্প খুঁজছে সরকার। নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তৎপরতা শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগ। সে হিসেবে সরকার সৌরবিদ্যুতের প্রতি জোর দিয়েছে। নবায়ণযোগ্য জ্বালানির নতুন মাত্রা যোগ হবে দেশের বিদ্যুতে। এবার দেশের গ্রিডে যুক্ত হতে যাচ্ছে জলবিদ্যুৎও। এই বিদ্যুৎ আসবে বন্ধুরাষ্ট্র নেপাল থেকে। অপর প্রতিবেশী ও বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে জুলাইয়ের শুরুতেই দেশে আসবে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ।

চলতি মাসেই নেপালে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারত হয়ে বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য ২৫ বছরমেয়াদি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হবে। মূলত ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে নেপাল থেকে এই বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে ইতোমধ্যেই নীতিগতভাবে সমঝোতা হয়েছে। চুক্তি সম্পন্ন হলে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে ট্রানজিট করে বাংলাদেশে ঢুকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (এনইএ) কর্মকর্তারা।

ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত বাংলাদেশ-নেপাল যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন সঞ্চালন লাইনের অংশবিশেষ ভারত ভূখণ্ডের মধ্যে নির্মিত হবে বিধায় বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি নির্ধারিত হবে বলে জানা যায়।

ভারতের জিএমআর গ্রুপ কর্তৃক নেপালে নির্মাণাধীন ৯০০ মেগাওয়াট আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আমদানি সম্পর্কীয় চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে এর আগে এক সভায় আলোচনা করেছেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।

নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুল মান ঘিসিং বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছরমেয়াদি বিদ্যুৎ চুক্তিতে সম্মত হয়েছি। বাংলাদেশের কাছে আমাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির শক্তি বাণিজ্য পরিচালক প্রবাল অধিকারী জানিয়েছেন, নেপালের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রথমে পাঁচ বছর মেয়াদি নবায়নযোগ্য চুক্তি করতে চেয়েছিল। বিদ্যুৎ খাতের অনিশ্চয়তার কারণে দীর্ঘমেয়াদির বদলে স্বল্পমেয়াদি চুক্তিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল ঢাকা।

তবে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ২৫ বছরমেয়াদি চুক্তি করতে সম্মত হয় বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুল মান ঘিসিং। তিনি বলেছেন, দাম ব্যতীত অন্য সবকিছু নিয়ে আমরা সম্মত হয়েছি।

বাংলাদেশ থেকে নেপালের বিদ্যুৎ আসবে ভারত হয়ে। যখন ভারত-বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে এ নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদিত হবে; তখনই বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে। আর এ চুক্তির মধ্যে দামের বিষয়টিও উঠে আসবে।

অথরিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ প্রথমে বিদ্যুতের দাম বাদে কারিগরি ও বাণিজ্যিক বিষয়গুলো নিয়ে সমাধানের আগ্রহ দেখায়। পরবর্তীতে দুই দেশ সেসব বিষয় নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়।

বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন হিসেবে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ নিয়ে নেপাল আলোচনার পথ খোলা রেখেছে বলে জানিয়েছেন কুল মান ঘিসিং। তিনি বলেছেন, বন্ধুত্বের অংশ হিসেবে আমরা ভালো একটি দাম প্রস্তাবের পরিকল্পনা করছি। কারণ এটি সরকার থেকে সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের যে দাম রয়েছে, সেটি একটি উদাহরণ হিসেবে নেয়া যেতে পারে। তবে দাম এখনো নির্ধারিত হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আপাতত আমদানির পরিমাণ কম হলেও সমস্যা নেই। আমরা কম দামে বিদ্যুৎ পাচ্ছি— এটাই বড় কথা। আগে শুরু হোক, তারপর আমরা পর্যায়ক্রমে আমদানি বাড়াব।

দামের বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, নেপালের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্ক আছে। আমরা কম দামেই বিদ্যুৎ পাব বলে আশা করছি। যেখানে তেল, গ্যাস বা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত লাগে, সেখানে এই বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে মাত্র তিন থেকে পাঁচ টাকায়।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি শুরুতেই ভারতের সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে চুক্তি হওয়া ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে করে আমাদের বিদ্যুৎ খাতে একটা বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলে আশা করছি। কম হলেও এখান থেকে যা পাওয়া যায়, তা-ই আমাদের জন্য লাভ।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা-সংক্রান্ত সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকেই উভয় পক্ষ ভারতকে সঙ্গে রেখে বিদ্যুৎবাণিজ্য শুরু করতে সম্মত হয়। এই বিদ্যুৎ ভারতের বহরমপুর এবং বাংলাদেশের ভেড়ামারা গ্রিডের মাধ্যমে আমদানি করবে বাংলাদেশ।

Share this post

PinIt
scroll to top