বিভিন্ন স্থানে ১১ মামলা : সাঈদীর ছেলে মাসুদসহ আসামি ২০ হাজার

lass.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:- 

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ১১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদীসহ আসামি ২০ হাজারের মতো।

সাঈদীর মরদেহ আটকে শাহবাগ এলাকায় তাণ্ডব চালানোয় জামায়াত-শিবিরের পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মঙ্গলবার রাতে মামলা করেছে। এতে মাসুদ সাঈদীসহ জামায়াতের চার নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি আসামিদের পরিচয় অজ্ঞাত। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে পল্টন থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করে। এতে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার জামায়াতের ১৬ নেতাকর্মী ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় আরও একশ থেকে দেড়শজনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে জামায়াত নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ নিয়ে তিনটি মামলা হয়েছে। কক্সবাজার সদর, চকরিয়া ও পেকুয়ায় সহিংসতায় ছয়টি মামলা হয়েছে।

এদিকে চকরিয়ায় সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্র হাতে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বুধবার পিরোজপুর থেকে ইন্দুরকানীতে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। উপজেলার বালিপাড়া, চণ্ডীপুর, টগড়া মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইন্দুরকানী থানার ওসি মো. আল-আমিন জানান, এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় সাঈদীর ছেলে ছাড়াও আসামি করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি সফিকুল ইসলাম মাসুদ ও দলের নেতা সাইফুল ইসলামকে।

পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৫১৯ রাউন্ড রাবার বুলেট, ১৪২ রাউন্ড পেলেট, ৩৪টি গ্যাস শেল, ৩৯টি কাইনেটিক প্রজেক্টাইল, ২৩টি ব্যাং গ্রেনেড ও ৩০টি সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। শাহবাগ থানার ওসি নুর মোহাম্মদ জানান, এসআই মো. জব্বার বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে জমায়েত হয়ে পুলিশের কাজে বাধা, আক্রমণ, গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত সোমবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাঈদীর মৃত্যু হয়। তাঁর মরদেহ পিরোজপুর নেওয়ার সময় বাধা দেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা ঢাকায় জানাজা পড়ানোর দাবি তুলে শাহবাগ এলাকায় তাণ্ডব চালান। অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর ও দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন তারা। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের মারধর করা হয়।

চকরিয়ার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় সংঘর্ষ হয়েছে। সহিংসতা নিয়ে একটি মামলার বাদী গুলিতে নিহত ফোরকানের স্ত্রী নুরুচ্ছফা। অন্য পাঁচ মামলার বাদী পুলিশ। এসব মামলায় ৪৬৬ জনের নাম উল্লেখসহ আসামি প্রায় ১২ হাজার। সংঘর্ষের সময় ইউএনও, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড এবং ওসির গাড়িতে হামলা করা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। জামায়াতের দাবি, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াতই পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে হামলা করেছে।

স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ঘটনার ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে লাল হেলমেট পরিহিত একজনের হাতে একনলা বন্দুক। স্থানীয়রা বলছেন, ওই ব্যক্তি চকরিয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিন। পাশে তাঁর ভাই মিরাজ উদ্দিন। পেছনে আছেন ১৫-২০ জন। তাদের মধ্যে আছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরী।

চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বেলালের একটি ছবি বুধবার সকাল থেকে ভাইরাল হয়েছে। আমি চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন থাকায় বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারিনি। প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে বেলাল সমকালকে বলেন, ‘হেলমেট পরিহিত অস্ত্রধারী ব্যক্তি আমি নই। আমি কেন সেখানে গুলি করতে যাব?’ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় পুলিশ কোনো গুলি ছোড়েনি। জামায়াত নেতাকর্মীরা সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি ভাঙচুর করেছে।

কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুল ইসলাম দাবি করেন, চকরিয়ার সংঘর্ষে হেলমেট পরিহিতদের নেতৃত্ব দিয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের এক নেতা। তিনি সরকারদলীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তবে জাফর আলম সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত মিথ্যাচার করছে। আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসংগঠনের কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। শোক দিবসের কর্মসূচি ও বন্যাকবলিতদের ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন সবাই। পুলিশের ওপর হামলা হচ্ছে জেনেই নেতাকর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।

চট্টগ্রামে মামলা

চট্টগ্রামে জামায়াতের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় দুটি ও খুলশী থানায় একটি মামলা হয়। সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিকেলে নগরের কাজীর দেউড়ি, আলমাস ও ওয়াসা মোড়সহ দেড় কিলোমিটারজুড়ে সংঘর্ষ হয়। ঘটনার পর ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে দুটি মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আরও আসামি আছে। পুলিশের কাজে বাধা এবং হামলার ঘটনায় মামলায় নগর জামায়াতের আমির মো. শাহজাহানকেও আসামি করা হয়েছে। এদিকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় খুলশী থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে।

Share this post

PinIt
scroll to top