দেড় যুগ ধরে ঝুলছে ৪১ মামলার বিচার – দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা

-আদালত.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:- 

দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে ব্যাপক জঙ্গি উত্থানের জানান দেয় জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, সরকারি স্থাপনাসহ প্রায় ৫০০ স্থানে হামলা চালানো হয়। এসব হামলায় দু’জন বিচারক নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হন। এ নিয়ে বিভিন্ন জেলায় করা হয় ১৫৯টি মামলা। এগুলোর মধ্যে ৪১টি মামলার বিচার এখনও চলছে। সাক্ষী না আসায় গত বছর রায় হয়নি একটি মামলারও।

মুন্সীগঞ্জ ছাড়া সব জেলায় হামলায় দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঝালকাঠিতে দুই বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদ নিহত হন। বোমা হামলার পাশাপাশি জেএমবি হামলার দায় স্বীকার করে লিফলেট বিতরণ করে। লিফলেটে তারা প্রচলিত বিচার পদ্ধতি বাতিলেরও দাবি জানায়। এর কয়েক বছর আগে থেকেই সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন স্থানে সিনেমা হল, যাত্রামঞ্চ, মাজার ও খানকায়ও বোমা হামলা চালিয়ে আসছিল। ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত জঙ্গিদের অনেকে এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। শীর্ষ নেতারা কারাগারে থাকায় নেতৃত্ব সংকটে দুর্বল হয়ে পড়েছে নিষিদ্ধ সংগঠনটি।

পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সিরিজ বোমা হামলায় সারাদেশে ১৫৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে বিচার শেষ হয়েছে ১০২টি মামলার এবং ৪১টি মামলা এখনও বিচারধীন। এ ছাড়া ১৬টি মামলা বিভিন্ন সময় আদালত থেকে খারিজ হয়েছে। সব মামলায় চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। মামলাগুলোতে চার্জশিটভুক্ত মোট আসামি ১ হাজার ১৩১ জন। এ পর্যন্ত রায়ে সাজা হয়েছে ৩২২ জনের। খালাস পেয়েছেন ৩৫৮ জন। অন্য আসামিদের অনেকে এখনও পলাতক। সর্বশেষ গত ৯ মে ময়মনসিংহে জঙ্গি হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামি জেএমবি সদস্য আজিজুল হক গোপালকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গোপাল ঢাকায় একটি ফ্যাশন হাউসের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায়। তিনি ২০০৫ সালে স্থানীয় একটি স্কুলে জেএমবিপ্রধান শায়খ আবদুর রহমানসহ জেএমবি সদস্যদের নিয়ে গোপন বৈঠক করতেন।

ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যার ঘটনায় করা মামলার রায় ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। বিচারিক আদালত এই মামলায় জেএমবিপ্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেন। পরে উচ্চ আদালতেও আসামিদের ওই সাজা বহাল রাখা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন মামলায় এ পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ৯ জনের।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল শুনানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের আপিল সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির পর ইতোমধ্যে সাত আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এই মুহূর্তে সিরিজ বোমা হামলা সংশ্লিষ্ট কোনো আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন নেই। এসব মামলার আসামিরা প্রায়ই হাইকোর্টে জামিনের জন্য আবেদন করে থাকে। তখন রাষ্ট্রপক্ষে গুরুত্বসহকারে শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়, যাতে তারা আইনিভাবে কোনো সুযোগ নিতে না পারে। এ ব্যাপারে আমরা সব সময়ই সচেষ্ট।’

ঢাকার আদালতে বর্তমানে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় করা পাঁচটি মামলা বিচারাধীন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে মামলা বিলম্বিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদের পাওয়া যায়নি। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে। এর পরও সাক্ষ্য গ্রহণ যা হয়েছে বা আরও কয়েকজনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত চাইলে এই পর্ব শেষ করতে পারেন। বিষয়টি আদালতের নজরে নেওয়া হবে।

সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে আদালতের ধার্য তারিখে সাক্ষীদের হাজির করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু মামলাগুলো অনেক পুরোনো হওয়ার কারণে সাক্ষীদের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে। মামলার নথি অনুযায়ী তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আদালত সমন দিলেও বারবার ফেরত আসছে। আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’

জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জঙ্গিসংশ্লিষ্ট মামলাগুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বিচার তো চলছে। মামলাগুলো কেন এখনও নিষ্পত্তি হচ্ছে না, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। আশা করছি, মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি হবে।

Share this post

PinIt
scroll to top