তিন ফরম্যাটে নেতৃত্বে সাকিব এক যুগ পর আবারও

sakib-Al.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:- 

মনে পড়ে সেই ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথা। ছয় ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিন ফরম্যাটের নেতৃত্বেই ছিলেন সাকিব। এক যুগ পর আবারো তিন ফরম্যাটের নেতৃত্ব ফিরে পেলেন তিনি। এবার পাশের দেশ ভারত এককভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে। এবারও সেই সাকিবই থাকবেন দলের নেতৃত্বে। এবার দিয়ে দ্বিতীয়বার ওয়ানডে বিশ্বকাপের মঞ্চে অধিনায়কত্ব করবেন সাকিব। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও যিনি দুবার দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

প্রথমবার ২০১০ সালের আসরে, দ্বিতীয়বার ২০২২ সালের সর্বশেষ আসরে। ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য ছিল অম্লমধুর। ‘বি’ গ্রুপে ছয় ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছিল সেবার। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানে অলআউট হওয়ার দুঃস্বপ্ন আছে বড় ক্ষত হয়ে। সাকিব ব্যাট হাতে ছয় ম্যাচে এক ফিফটিতে করেন মাত্র ১৪২ রান। বল হাতে আট উইকেট পেয়েছিলেন। সেরা বোলিং ছিল ২৮ রান খরচায় দুই উইকেট। তাই সাকিবের নিজের জন্যও আসরটি মনের মতো ছিল না। এরপর সাকিব নিজেকে পরিণত করেছেন অনেক। তখন বয়স ছিল মাত্র ২৪। সময়ের সাথে সাথে তার খেলার মান বেড়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপে যেমন ব্যাটে-বলে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক ছিলেন তিনি।

২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন সাকিব। পরে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব করেন তিনি। মোট ৫০টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। এর মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে ২৩ ওয়ানডেতে। আর টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৯ ম্যাচে, যার মধ্যে চারটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে ৩৯ ম্যাচে জয় ১৬টিতে। গত এক মাসে অনেক নাটকীয়তা হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। সর্বশেষ ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়েন তামিম। তারপর থেকেই গুঞ্জন ছিল সাকিবের অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়া নিয়ে।

অবশেষে সেই সাকিবের ওপরেই ভরসা রেখেছেন বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপন। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক করা হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। গতকাল গুলশানে নিজ বাসভবনে এটি নিশ্চিত করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। সাকিবকে অধিনায়ক করা প্রসঙ্গে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের সাকিবকে অধিনায়ক করা হয়েছে। বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের দল আজ ঘোষণা করা হবে। আপাতত এশিয়া কাপের ১৭ জনের দল দেবেন নির্বাচকরা। গত ৩ আগস্ট ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। এরপর থেকেই নতুন অধিনায়ক খুঁজছিল বিসিবি। গত ৮ আগস্ট পরিচালকদের জরুরি সভাও ডাকা হয় এ ব্যাপারে। যদিও অধিনায়ক ঠিক করা ছাড়াই সে সভা শেষ হয়। তবে জানা যায়, অধিনায়কত্বের ব্যাপারটি নির্ভর করছে সাকিবের ইচ্ছার ওপর। সাকিব যদি টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক থেকেই ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব করার তৃতীয় দায়িত্বটি নিতে চান, তা বরং সাদরেই গ্রহণ করবে বিসিবি। ফলে অধিনায়কত্বের বল ছিল সাকিবের কোর্টেই। সাকিব ছাড়াও সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে ছিল লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের নামও। তবে শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব দেয়া হলো সাকিবকেই। ওয়ানডে সংস্করণে সাকিবের নেতৃত্ব দেয়া অবশ্য এটিই প্রথম নয়।

শুক্রবার সাংবাদিকদের পাপন বলেন, সাকিবের পটেনশিয়াল নিয়ে তো কোনো সন্দেহ নেই। একটি জিনিস খুব ভালো লাগছে আমার, সামপ্রতিক সময়ে গত এক বছর ধরে দেখছি। সেটি হচ্ছে সাকিবকে নিয়ে আমার যে সন্দেহ ছিল, এটি আমার ব্যক্তিগত কথা, ও কতটা সিরিয়াস, কোন খেলাটা খেলবে কিংবা খেলবে না; এখন দেখছি ওর চেয়ে সিরিয়াস কেউ নেই ক্রিকেট নিয়ে। আমাদের যে পরিমাণ খেলা, সেগুলো তো খেলছেই, কন্টিনিউয়াসলি খেলে যাচ্ছে। কানাডায় গেল, এখন আবার শ্রীলঙ্কায় গেল। এই যে এখন বিশ্বকাপে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছে, আমার কাছে মনে হয়, সে এখন টোটালি ফোকাসড অন ক্রিকেট। এটা আমাদের জন্য খুব বড় বিষয়। ওর সামর্থ্য নিয়ে কখনো কোনো সন্দেহ থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

কিন্তু বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর খেলে সাকিব তিন ফরম্যাটে জাতীয় দলের নেতৃত্ব সামলাতে পারবেন? নাকি তাকে কোনো ফরম্যাট থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। অধিনায়কত্ব ইস্যুতে সাকিবের অবস্থান কী? এ বিষয়ে পাপন জানালেন, ওর সাকিব সঙ্গে সেরকম আলোচনায় হয়নি। ও দেশে এলে, তারপর বলতে পারব। দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনাটাও জানতে হবে। কারণ এক সাথে তিনটি ওর ওপর বোঝা হয়ে যাবে। কারণ যে পরিমাণ খেলা আমাদের, কাজেই ওর সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। ওর সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলাটা এখন কঠিন।

Share this post

PinIt
scroll to top