জন্মনিবন্ধন বন্ধ অদৃশ্য কারণে ।।

jonmosonod.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:- 

আর্থিক নিয়ন্ত্রণ চায় দক্ষিণ সিটি
বিঘ্নিত হচ্ছে নাগরিকসেবা, চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী
সার্ভার জটিলতায় ভুল তথ্য দিচ্ছে আঞ্চলিক অফিস
শিগগিরই সেবা চালুর আশ্বাস সিইওর, জানাননি বন্ধের কারণ
প্রলোভনে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে দালালচক্র
বিভিন্ন নাগরিকসেবা পেতে জন্মনিবন্ধন একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। প্রতিটি নাগরিকের এটি থাকা অনেকটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে নিবন্ধিত হতে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ ভোগান্তি নিত্যদিনের ঘটনা হলেও রাজধানীবাসীর জন্য এটি মহাদুর্ভোগে রূপ নিয়েছে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে এ নিবন্ধন কার্যক্রম। এতে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি বিভিন্ন সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকরা।

দীর্ঘ সময় ধরে নিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকলেও এ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। কেউ বলছেন সার্ভার জটিলতা; আবার কেউ বলছেন সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কার্যক্রম পরিচালনা করতেই সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া। তবে সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ সূত্রের তথ্যমতে, আর্থিক লেনদেন নিজেদের আয়ত্তে আনতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রয়েছে। শিগগিরই এটি চালু হবে।’ তবে কী কারণে বন্ধ রয়েছে, তা জানাননি তিনি। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সিটি কর্পোরেশন ইচ্ছাকৃতভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রেখেছে। তারা চাইছে নিবন্ধন কার্যক্রম জাতীয় সার্ভার থেকে পৃথক করে নিজেদের আয়ত্তে আনতে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহানা আক্তার জানান, সিটি কর্পোরেশন থেকে তাদের জানানো হয়েছে, নাগরিক ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম নিজস্ব ব্যবস্থায় আনার চেষ্টা করছেন মেয়র। তাই সাময়িকভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, কেউ যাতে একাধিকবার নিবন্ধিত না হন, এটি বন্ধ করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

তবে নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে ভিন্ন কথা। নিবন্ধন কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমার সংবাদকে জানান, সার্ভার জটিলতার কথা বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। মূলত আর্থিক লেনদেন সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছেন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে মেয়রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। শিগরিরই একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে জন্মনিবন্ধন করতে হলে প্রথমে অনলাইলে ফরম পূরণ করতে হয়। এরপর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিবন্ধনের নির্ধারিত টাকা পেমেন্ট করতে হয়। যা জাতীয় নিবন্ধন হিসেবে সরাসরি জমা হয়। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন চাইছে এটি নিজেদের ফান্ডে নিয়ে আসতে। যেহেতু সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অধীন, তাই নিজ নাগরিকের নিবন্ধন এবং এর ফি নিজেদের আয়ত্তে আনতে চাইছেন মেয়র। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের এ ব্যবস্থা নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রেখে কেন করা হচ্ছে— তা নিয়ে ক্ষুব্ধ নাগরিকরা। তারা বলছেন, সরকার এটি নাও দিতে পারে। কারণ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে এ সুবিধা দেয়া হলে পরে অন্য সিটি ও পৌরসভাগুলোও এ সুবিধা চাইবে। এ ছাড়া দাপ্তরিক দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে— এটাই স্বাভাবিক। তাই দ্রুত নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করা উচিত বলে বলে মনে করে নগরবাসী।

স্ত্রীর জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের মো. সম্রাট আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমি দেড় মাস ধরে স্ত্রীর জন্মনিবন্ধন করানোর জন্য অঞ্চলিক অফিসে যাচ্ছি। তাদের কাছে গেলেই বলে, এখন নিবন্ধন করানো যাবে না। কারণ জানতে চাইলে সার্ভারের সমস্যার কথা বলে।’ তিনি বলন, সন্তানদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন করানোর জন্য আমার স্ত্রীরও জন্মনিবন্ধন করা জরুরি। স্ত্রীর নিবন্ধন করতে না পারায় সব আটকে আছে। বেশ কয়েকবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা একই কথা বলেন। দীর্ঘদিন কীভাবে সার্ভার বন্ধ থাতে পারে আমার বোধগম্য নয়। মতিঝিলের বাসিন্দা রফিক জানান, ‘জন্মনিবন্ধন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এটি ছাড়া অফিসিয়াল অনেক কাজই করা যাচ্ছে না। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।’

জন্মনিবন্ধন বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হওয়ায় সবার জন্য আবশ্যিকভাবে তা প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে যোগদান, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নাগরিক সেবার ১৯টি ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় জন্মসনদের। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ২০২০ সালে তৈরি করা একটি তথ্য অনুযায়ী, এই সিটিতে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় বিশাল এ জনগোষ্ঠী চরম ভোগান্তিতে আছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিকে পুঁজি করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দালালচক্র। ‘দ্রুত সময়ে, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই জন্মসনদ দেয়া হবে’— এমন প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অর্থ। তবে টাকা দিলেও মিলছে না সমাধান। সার্ভার সমস্যা, বাবা-মায়ের নামের বানান ভুল, অনলাইন কপিতে সমস্যা— এমন নানা জটিলতার অজুহাতে মাসের পর মাস ঝুলে থাকে আবেদন।

Share this post

PinIt
scroll to top