প্রাথমিক তালিকায় খুলনায় ৩, যশোরে ৮ ও ঝিনাইদহে ২ নিবন্ধনযোগ্য ৬৮ সংস্থার তালিকায় নেই সেই আবেদ আলীর দুই সংস্থা

abad.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:-  আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের ৬৮টি বেসরকারি সংস্থাকে ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা’ হিসেবে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধনযোগ্য বলে নির্বাচিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার সংস্থাগুলোর নামের তালিকা প্রকাশ করে ইসি জানিয়েছে, এই সংস্থাগুলোর বিষয়ে কোনো দাবি বা আপত্তি থাকলে তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
ইসির দেওয়া তালিকায় দেখা যায়, আলোচিত-সমালোচিত দু’টি সংস্থা ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন এবার পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। এই দু’টি সংস্থাও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান আবেদ আলী আর সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব তিনি।

গত জাতীয় নির্বাচনে অনভিজ্ঞ কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়ে এসে সমালোচিত হয়েছিল সার্ক মানবাধিকার ফোরাম। আর এবার নির্বাচনের আগে কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে দেশে এনে ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম।

ইসি জানায়, নির্ধারিত সময়ে আসা দাবি-আপত্তিগুলো শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে। এরপর চূড়ান্তভাবে পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন দেওয়া হবে। চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন পাওয়া স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবে।

প্রাথমিক ভাবে যে ৬৮টি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান অনুমতি পেয়েছে সেগুলোর মধ্যে খুলনায় ওয়েসডা, ডেভেলপমেন্ট এডুকেশন এন্ড পীস (ডেপ) ও ডেভেলপমেন্ট অব মহিলা সোসাইটি (ডিএমএস), যশোরে বাঁচতে শেখা, বঞ্চিতা সমাজ কল্যাণ সংস্থা, হিউম্যান রাইটস ভয়েস, এসো বাঁচতে শিখি (এবাস), ডেভেলপমেন্ট পার্টনার (ডিপি), প্রকাশ গণ কেন্দ্র ও সার্ভিসেস ফর ইকুয়িটি এন্ড ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট (সীড) ও সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস, ঝিনাইনদহে ডিসএ্যাবিলিটি ইনকুইজিশন এ্যাক্টিভিটিজ (দিয়া) ও আব্দুল মোমেন খান মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন-এসডাপ।

তাছাড়া আরও যেসকল প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসুস, সেবা সোস্যাল ফাউন্ডেশন, অগ্রদূত সংস্থা (এএস), একটিভিটি ফর রিফরমেশন অব বেসিক নীডস-আরবান, হাইলাইট ফাউন্ডেশন, মুভ ফাউন্ডেশন, ডেমক্রেসি ওয়াচ, জানিপপ-জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ, আজমপুর শ্রমজীবী উন্নয়ন সংস্থা (আসাস), বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন, লুৎফর রহমান ভূঁইয়া ফাউন্ডেশন (এলআরবি), যুব উন্নয়ন সংস্থা, শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র (এসপিবিকে), কেরানীগঞ্জ হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, এসকে কল্যাণী ফাউন্ডেশন, সোসাইটি ফর সোশ্যাল এডভান্সমেন্ট অব রুরাল পিপল (সাপ), সেতু রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এসআরডিএস), সোসাইটি ফর ট্রেনিং এন্ড রিহেবিলিটেশন (স্টার), রুরাল এসোসিয়েশন ফর সোস্যাল এ্যাডভান্সমেন্ট (রাসা), ডেভেলপমেন্ট হেল্পিং কী (ডিএইচকে), তালতলা যুব উন্নয়ন সংগঠন (টাইডা), স্বাস্থ্য শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশন (সেফ), ডপস ফাউন্ডেশন, এসোসিয়েশন ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি), ভলান্টরী অর্গানাইজেশন ফর সোসাল ডেভেলপমেন্ট (ভোসড), ক্রিয়েটিভ সোসাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি), জেন্ডার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সোসাইটি (জেমস), বেসিক, সমাজ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এসপিকে), রাজবাড়ী উন্নয়ন সংস্থা (রাস), গরীব উন্নয়ন সংস্থা (জিইউএস), সমাহার- মাল্টিডিসিপ্লিনারি রিচার্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশেন, সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (সাস), হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশ, সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডিও), রূপনগর শিক্ষা স্বাস্থ্য সহায়তা ফাউন্ডেশন-রিহাফ, সোস্যাল ইক্যুআলিটি ফর ইফেকটিভ ডেভেলপমেন্ট (সীড), ইন্টিগ্রেটেড সোসাইটি ফর রেইজ অব হোপ (রিশ), সমন্বিত নারী উন্নয়ন সংস্থা (এসএনইউএস), পল­ী একতা উন্নয়ন সংস্থা (রুডো), শীল্ড (সোসাইটি ফর হিউম্যান ই¤প্র“ভমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট এন্ড লাস্টিং ডিভলপমেন্ট, সেজুতি হেলথ এন্ড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সিডফ), এসো জাতি গড়ি (এজাগ), সোশ্যাল এ্যাডভান্সমেন্ট এন্ড কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (সাকো), ফোরাম ফর ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (এফএফডিএ), রুরাল এন্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (রাউডো), তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, হিউম্যান ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি-হিডস, রুরাল এডভান্সমেন্ট কমিটি ফর বাংলাদেশ ‘র‌্যাক-বাংলাদেশ’, গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক), ইকো-কনসার্ন এ্যাসিসিয়েশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কমিশন এবং গণউন্নয়ন কেন্দ্র (এটক) ।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য দেশের ২০৬টি বেসরকারি সংস্থা ইসিতে আবেদন করে। পরে ইসির গঠন করা সাত সদস্যের একটি কমিটি আবেদনগুলো প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করে ৬৮টি সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করে।
ইসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। ইতিমধ্যে এই সংস্থাগুলোর পাঁচ বছর মেয়াদের নিবন্ধন শেষ হয়েছে। নতুন করে নিবন্ধনের জন্য চলতি বছর ইসি আবেদন আহŸান করে। পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত সময় ২ ফেব্র“য়ারির মধ্যে ১৯৯টি সংস্থা আবেদন করে। এরপর আরও ১১টি সংস্থা আবেদন গ্রহণ করে কমিশন। ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি ২১০টি সংস্থার মধ্যে প্রাথমিক যাচাই শেষে ৯৪টি সংস্থার তালিকা নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করে। গতকাল নির্বাচন কমিশন ৬৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে। এর মধ্যে ২৯টি সংস্থা গত জাতীয় নির্বাচনের সময়ও পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত ছিল।
নির্বাচন কমিশনার মোঃ আহসান হাবিব খান বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আবেদনকারী সংস্থাগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত যথাযথভাবে যাচাই বাছাই করে কমিশনে উপস্থাপন করে। কমিশন এসব তথ্য ও পর্যবেক্ষক নীতিমালা অনুসরণ করে নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে ৬৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নির্বাচিত করেছে।
ইসি সূত্র জানায়, স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের মেয়াদ থাকে পাঁচ বছর। এই সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পায় নিবন্ধিত সংস্থাগুলো।
ইসির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব সংস্থা গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে এবং গঠনতন্ত্রে এ বিষয়সহ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে তথ্য প্রচার ও উদ্বুদ্ধ করার অঙ্গীকার রয়েছে, কেবল সেসব বেসরকারি সংস্থাই নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বা আছেন কিংবা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা সময়ের মধ্যে কোনো নির্বাচনের প্রার্থী হতে আগ্রহী কোনো ব্যক্তি যদি আবেদনকারী কোনো সংস্থার প্রধান নির্বাহী কিংবা পরিচালনা পর্ষদের বা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হয়ে থাকেন, তাহলে ওই সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না।

Share this post

PinIt
scroll to top