দলের নেতা-কর্মীদের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
রোববার গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার সমাপনী ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় দলীয় প্রধানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সভায় উপস্থিত সকল নেতা-কর্মী হাত তুলে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত সাড়ে ১৪ বছরে প্রতিটি এলাকায় যেসব উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশে এসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।’
তৃণমূলের নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনোনয়ন যাকেই দেই। আমি কিন্তু ঘরে বসে থাকি না, সারাদিন কাজ করি, সংগঠনের কাজও করি। কোথায় কার কী অবস্থা সেটা কিন্তু ছয় মাস পরপর জরিপ করি। আমাদের এমপিদের কী অবস্থা, অন্য জনপ্রতিনিধিদের কী অবস্থা তার একটা হিসাব নেওয়ার চেষ্টা করি।
‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর নির্ভর করছে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া বা না যাওয়া। সে কথাটা মাথায় রেখে, আমাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমরা যাকেই মনোনয়ন দেই, ভালো-মন্দ, কানা-খোঁড়া যাই হোক, আপনাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে তাকেই জয়ী করবেন। আমরা যখন মনোনয়ন দেব, অবশ্যই আমাদের একটা হিসাব থাকবে যে কাকে দিলে আমরা আসনটা পাব।’
তিনি বলেন, ‘অনেক এসএমএস দিলে, গিবত গাইলেই আমি তাদের কথা শুনব, এমন নয়। এটা আমি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি। কারণ, আমার নিজের হিসাব-নিকাশ আছে। ৪২ বছর আপনাদের সঙ্গে আছি। ১৯৮১ সালে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। এরপর কিন্তু আমি প্রতিটি এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেছি। ফলে আমার কিন্তু ধারণা আছে। কার অবস্থা কী সেটা বুঝেই কিন্তু আমরা মনোনয়ন দেই।’
বিএনপি ও এর নেতাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির জন্মই হয়েছে সম্পূর্ণ পাপের মধ্যে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে এবং সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে বিএনপির জন্ম হয়েছে।
‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে বিএনপি অগ্নিসংযোগ, মানুষ হত্যা, অবরোধ কর্মসূচিসহ নানা অপকর্ম করেছে। তবে কোনো আন্দোলনই দেশ ও জনগণের ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ, আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী সংগঠন এবং জনগণের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে,’ বলেন তিনি।
গুজব ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনও কারও কাছে মাথা নত করে না।’
সভায় আওয়ামী লীগের প্রায় ৫ হাজার নেতা-কর্মী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অংশ নেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, আওয়ামী লীগের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌরসভা ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের নেতৃবৃন্দকে দিকনির্দেশনা দিতে আওয়ামী লীগ এ ধরনের সভার আয়োজন করে থাকে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালের ২৩ জুন সর্বশেষ এ ধরনের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকের শুরুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখেন এবং ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম সভা পরিচালনা করেন।