শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনা ,নির্বাচনে বিজয়ী হতে শৃঙ্খলাবিরোধীদের মোকাবিলা ও উন্নয়ন প্রচার

hasena.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:- আ.লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা
২০টি সাংগঠনিক জেলার নেতাদের কথা শোনেন শেখ হাসিনা

আজ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ১৪ দলের সমাবেশ

ভারত সফরে আ.লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের এক বিশেষ বর্ধিত সভা করেন। ওই সভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিশেষ ওই বর্ধিত সভায় অন্তত ২০টি সাংগঠনিক জেলার নেতাদের কথা শোনেন শেখ হাসিনা।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা আগামী নির্বাচনে করণীয় বিষয় নিয়ে সভায় আলোচনা করেন। শেখ হাসিনা নির্বাচনের প্রস্তুতি, বিরোধী দলগুলোকে মোকাবিলা, সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে করণীয় নিয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। বিশেষ করে ভোটের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৪ বছরের উন্নয়নচিত্র জনগণের কাছে তুলে ধরতে গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ ওই বর্ধিত সভার দিনেই আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদশ ভারত সফরে গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিদলের ভারত সফর রাজনৈতিক অঙ্গনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়াও আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দলটির মিত্ররাও এখন সক্রিয়। গত ৪ আগস্ট একটি সভা থেকে আজ ৭ আগস্ট রাজধানীতে একটি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় ১৪ দলীয় জোট। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আজ এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ এখন পুরোপুরি নির্বাচনি তরীতে রয়েছে। ভোটের দিন পর্যন্ত তারা শতভাগ সক্রিয় থাকছে।

গতকালের বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে শেখ হাসিনা তার সরকারের সাড়ে ১৪ বছরের অর্জন তৃণমূলের মানুষের সামনে তুলে ধরতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দেন। একইসঙ্গে আগামী সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি দলকে শক্তিশালী করতে বলেন এবং জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জনগণের শক্তিকেই তার দলের শক্তি হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ কেবল জনগণের কাছেই দায়বদ্ধ। তিনি বলেন, ‘জনগণের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি। আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নেই, জনগণই আওয়ামী লীগের প্রভু। আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।’ শেখ হাসিনা গতকাল রোববার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের বিশেষ বর্ধিত সভার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগই শুধু দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ কারণেই আমরা নির্বাচনের সময় দেশবাসীর কাছে আমাদের অঙ্গীকার করে থাকি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কতটুকু করতে পেরেছি এবং ভবিষ্যতে কী করব— তা আমরা শুধু জনগণকে বলি, অন্য কাউকে নয়।’ এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার দলের নেতাকর্মীদের বলেন, ‘আমি চাই সবাই এটা মাথায় রেখে একসঙ্গে কাজ করবেন।’ সভায় অংশ নেয়া জনপ্রতিনিধিরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বিশেষ এই বর্ধিত সভায় যোগ দিয়ে উন্নয়নের প্রচার আর সক্রিয়তার বার্তা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। তারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এরকম সভা করা আর সম্ভব হবে না। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২০টি সাংগঠনিক জেলার বক্তব্য শুনেছেন এবং সেগুলো নোট ডাউন করে রেখেছেন। নেতারা জানান, শেখ হাসিনা আমাদের বলেছেন আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন করেছে, তা কেউ কখনো করেনি। এই উন্নয়নের বার্তাই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বলেছেন। আর আমরা বলেছি, আমরা আপনার হাতে আবারও দেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব তুলে দিতে চাই। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। সভায় নেতারা বলেন, আগামী নির্বাচন যথাসময়ে হবে। দলীয়প্রধান-সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনে মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে না বলে আমরা আশা করি। কারণ তারা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা ক্ষমতায় এলে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হবে। আমরা মাঠ পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ আছি। যিনি নৌকা প্রতীক পাবেন, তার সঙ্গে আমরা কাজ করে বিজয়ী করব। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমাদের চলার পথ মসৃণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের জনগণ শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে শেখ হাসিনাকে আবার বিজয়ী করবে বলে মনে করেন তারা।

আগামী নির্বাচনে জয়ের বন্দরে পৌঁছাবে আ.লীগ

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের বন্দরে পৌঁছাবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের ‘বিশেষ বর্ধিত সভা’য় এমন মন্তব্য করেন তিনি। তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভয় নেই, শেখ হাসিনা আছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা আজও আমাদের সবচেয়ে আস্থার ঠিকানা। আমরা তার নেতৃত্বে এগিয়ে যাব। তার নেত্বত্বে আগামী নির্বাচনে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাব। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাব।

অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিশ্বসংকটের মধ্যেও একজন শেখ হাসিনা সবকিছু শক্ত হাতে মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। এখন বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিছু দুঃখ আছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। আমরা কষ্ট পাচ্ছি। বড় বড় দেশগুলোর জন্য দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। তবুও সব সামলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সংকট ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা মাথানত করতে জানেন না।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। আবার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হুমকির মুখে। তবে আমরা এই দেশকে পাকিস্তানের বন্ধুদের হাতে তুলে দেব না। এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আস্থার ঠিকানা। আমরা তার নেতৃত্বে এগিয়ে যাব। আপনারা প্রস্তুত থাকুন।

আজ ১৪ দলের সমাবেশ

আজ সোমবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। গত ৪ আগস্ট বিকালে ১৪ দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সভা শেষে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। ওই সভায় ১৪ দলের নেতারা বলেন, অতীতের মতোই ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি-জামায়াতের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে। আগামী নির্বাচন অন্য সব নির্বাচনের মতোই হবে বলে মন্তব্য করেন ১৪ দলের নেতারা। তারা বলেন, এবারের নির্বাচন দেশরক্ষার, উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার। আর বিএনপি নির্বাচন চায় না। তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করতে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

ভারত সফরে আ.লীগের পাঁচ নেতা

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে ঢাকা ছেড়েছে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল রোববার বিকাল ৫টায় একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তারা। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভীন জামান ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, প্রতিনিধিদলটি আগামী ৯ আগস্ট দেশে ফিরবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের এই প্রতিনিধিদলের বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের গতকালের বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে আগামী নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ এবং এ সংক্রান্ত দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়। পাশাপাশি তৃণমূলের কাছ থেকেও মাঠের প্রকৃত চিত্র জানার চেষ্টা করেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। সভায় আওয়ামী লীগের প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অংশ নেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, আওয়ামী লীগের জেলা, মহানগর, উপজেলা এবং পৌরসভা ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের নেতাদের নির্দেশনা দিতে এ ধরনের সভা করে থাকে আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭-এর ২৩ জুন এ ধরনের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

Share this post

PinIt
scroll to top