ঢাকা প্রতিনিধি :- ঢাকায় পদযাত্রা প্রবেশমুখে অবস্থান ও মহাসমাবেশে শক্তি সঞ্চয়
কী কর্মসূচি আসবে জানেন শুধু তারেক রহমান, তথ্যফাঁসে সতর্কতা
চলতি মাসে গতানুগতিক সেপ্টেম্বরে সহিংস রূপ নেয়ার আশঙ্কা
আগামীতে রাজপথে ভূমিকার মাধ্যমেই শীর্ষ নেতাদের ভাগ্য নির্ধারণ
যে কোনো মুহূর্তে বড় কিছুর ঘোষণা আসবে
—আমীর খসরু মাহমুদ
আগস্টেও কর্মসূচি চলবে তবে মূল টার্গেট সেপ্টেম্বর
—সাইফুল হক
দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। কেটেছে আন্দোলন-সংগ্রামের ব্যর্থতা। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বন্দিসহ অন্তত শতাধিক ইস্যুতেও কোনো আন্দোলন করতে পারেনি দলটি। বর্তমানে সরকার পতনের এক দফার ঘোষণা দিয়ে মাঠে রয়েছে। বর্ষার সময়ে দলীয় কর্মসূচি পালনে ঘটছে ব্যাঘাত। গেলো শুক্রবারে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের সাজার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে হাঁটুপানিতেই। ভাটা দেখা গেছে নেতাকর্মী উপস্থিতির। গেলো মাসে বড় সমাবেশগুলোতে ফকিরাপুল ও নাইটিঙ্গেল মোড় উপস্থিতি ছাড়িয়ে গেলেও সব শেষের সমাবেশে লোক ছিল হাতেগোনা। কিছু নেতাকর্মী ভিজেছেন আর কিছু নেতাকর্মী ছাতা নিয়ে বসে থেকে বক্তব্য শুনেছেন। এর মধ্যেই চলে আসে এসএসসিসহ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো। প্রেক্ষাপট কঠিন থেকেই কঠিনই হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও বলেছেন, অক্টোবরেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এমতাবস্থায় আন্দোলনের ফল ঘরে তুলতে সময় আছে আর মাত্র দুই মাসেরও কম সময়। এর মধ্যে যদি বিএনপি দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয় তাহলে একাদশের মতো আরেকটি পরাজয় দলটির জন্য অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন স্বয়ং দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপির হাইকমান্ডের অনেকে বলছেন, যেকোনো মূল্য সরকারকে সরাতে হবে। রাজপঠের কঠিন আন্দোলন নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। অন্যথায় বিএনপির জন্য আরেকটি একাদশ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
বিএনপি ও জোটসূত্রগুলো বলছে, চলতি আগস্ট ও আগামী সেপ্টেম্বরকে টার্গেট করে নতুন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এ সপ্তাহে চলতি মাসের জন্য ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে সমাবেশ, অবস্থান, পদযাত্রা, রোডমার্চ কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। তাদের মূল টার্গেট সেপ্টেম্বর। আগস্ট শোকের মাস হওয়ায় গতানুগতিক কর্মসূচি দিয়ে তারা রাজপথে থাকবে। সেপ্টেম্বরে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করার মতো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে তারা। শান্ত পরিবেশ বিনষ্ট হতে পারে বলেও বলছেন দলটির নেতাকর্মীরা। যে কর্মসূচিতে সরকারেরর টনক নড়বে তেমন কর্মসূচি নেয়া হবে। আগস্টের মধ্যে যদি সরকার দাবি না মানে, পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দেয় তাহলে অহিংস কর্মসূচি থেকে সহিংস কর্মসূচিতেও তারা হাঁটবে বলে দাবি তুলেছে। বিদেশিদের কাছে দেশের অবস্থা ইতোমধ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। শুধু বিদেশিদের দিকেই তারা আর তাকিয়ে থাকবে না। টার্গেট রাজপথের কর্মসূচি। বিএনপির অন্য একটি সূত্র বলছে, তত্ত্বাবধায়ক দাবি আদায়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সংবাদে তত্ত্বাবধায়ক যুক্ত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে আদালতেও যেতে পারে।
দলটির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর থেকেই কূটনীতিকদের সাথে বিএনপি সব কিছু সমন্বয় করেছে। সরকারের ১৪ বছরের আমলনামা, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও নানা তথ্যচিত্র সিডি আকারে উপস্থাপন করেছে। আন্দোলন-সংগ্রামে বিদেশিদের কিছু প্রেশক্রিপশনও তারা গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা-মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, জার্মানিসহ ঢাকায় নিযুক্ত ২৫টি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে দলটি। সেখানে অবস্থান কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ ও সরকারি দলের হামলা, গুলিবর্ষণ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, মামলা-গ্রেপ্তার, নির্যাতনের ঘটনা ভিডিও ফুটেজসহ কূটনীতিকদের সামনে তুলে ধরা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটিও কূটনীতিকদের জানায় বিএনপি। এ ছাড়া ২৮ জুলাই মহাসমাবেশের আগের দিন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গেও বৈঠক করেন দলটির নেতারা। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতির মাধ্যমে বিএনপির ভূমিকাও তুলে ধরা হয়।
ঢাকায় পদযাত্রা, প্রবেশমুখে অবস্থান ও মহাসমাবেশের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বিএনপির জনপ্রিয়তার বার্তা উপস্থাপিত হয়েছে। সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি ও গেলো ২৯ জুলাই আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঢাকায় প্রায় তিন ঘণ্টা সংঘর্ষের মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তির ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে। আগামীতে দাবি আদায়ে রাজপথে এমন কর্মসূচি আরও পালন করা হবে। দাবি আদায়ে সরকার নরম না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে বলেও দাবি তোলা হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে। ২৯ জুলাই বিএনপির যারা রাজপথে নামেনি, ঢিলেমি করেছে তাদের তালিকাও করা হচ্ছে। আগামীতে তাদের বিষয়ে দলে ভালো কোনো অবস্থানও থাকবে না। রাজপথের ভূমিকার মাধ্যমেই নেতাকর্মীদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে, তারেক রহমান বার্তা দিয়েছেন বলে দাবি দলটির বড় অংশে। শীর্ষ নেতাদের অনেকে অসুস্থ থাকায় রাজপথে না নামতে পারলেও চিন্তিত হচ্ছে না তারা। তরুণ নেতাদের দিয়ে ঢাকামুখী টার্গেট করে কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের ফল আগামী সেপ্টেম্বরে তোলার প্রস্তুতি নিয়ে হাঁটছে তারা। তবে পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে চলতি আগস্টেও যেকোনো মুহূর্তে বড় ঘোষণা আসতে পারে। সেপ্টেম্বরে যে বড় কর্মসূচি রয়েছে তা নিয়ে দলে পর্যালোচনা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান পরিস্থিতির আলোকে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। গোপনীয়তা রক্ষায় আগেই জানানো হচ্ছে না। তাই ঘোষণার আগ পর্যন্ত দলের সিনিয়র নেতারাও জানবেন না কর্মসূচির ব্যাপারে।
জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘যুগপৎভাবে আরো কিছু কর্মসূচি চলতি সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে। গেলো ২৯ জুলাই কর্মসূচি শর্ট প্ল্যানে করা হয়েছে। সেখানে কিছু দুর্বলতা ছিল, আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে বড় কর্মসূচিগুলোতে আর তেমন খুত থাকবে না। সরকার পতনের আন্দোলন কর্মসূচি তীব্রভাবে আসবে। আগস্টেও কর্মসূচি চলবে। তবে মূল টার্গেট সেপ্টেম্বর। যে কর্মসূচিতে সরকার সরে যেতে বাধ্য হবে, এমন কর্মসূচিই নেয়া হচ্ছে। আন্দোলন সব সময় অহিংস থাকবে না। পরিবেশে পরিস্থিতির আলোকে যেকোনো দিকে মোড নিতে পারে। আমরা মনে করছি, সেপ্টেম্বরের আন্দোলনে সরকার সরে যেতে বাধ্য হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটিদির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আগামীতে কোনো দিবস বা ইস্যুতে আমাদের আন্দোলনে বিরতি আসবে না। নির্দিষ্ট দিনক্ষণের অপেক্ষা করা হবে না, যেকোনো মুহূর্তে বড় কিছুর ঘোষণা আসবে। দেশে এখন গণতন্ত্র রক্ষার চেয়ে আর কোনো বড় ইস্যু নেই। বিদেশিরাও আজ বলছেন, এই সরকারকে সরে যেতে। দেশের জনগণ আওয়াজ তুলেছে সরে যেতে। সরকার সরে যাওয়ার বড় ইস্যু ছাড়া দেশে আর কোনো ইস্যু নেই। কেউ যদি মনে করে কোনো ইস্যুর কারণে আন্দোলনে বিরতি আসবে, তাহলে ভুল ভাববে বলে আমি মনে করছি।’