থেমে থেমে বৃষ্টি, ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা

obonoti.webp

দেশের তথ্য ডেস্ক :-  রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে পড়া বৃষ্টিতে মশা বেড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে এ ধরনের বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এমন বৃষ্টি চলতি মাসের ১০ দিন থাকতে পারে।

আরো দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু বৃষ্টিতে মশা বাড়ার শঙ্কাএমন পরিস্থিতিতে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় আরো এক হাজার ৭৫৭ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এই সময়ে মারা গেছে আরো ১০ জন। এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হলো ২৯৩ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।

গতকাল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর তথ্য জানা গেছে। ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কেকা রায় চৌধুরী এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গতকাল ভোর রাতে মূল দিবা (বাংলা ভার্সন) শাখার তৃতীয় শ্রেণি খ শাখার শিক্ষার্থী খন্দকার ঈয়াশা সুলতানা ফাইহা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।

গতকাল মারা যাওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের (২০২১-২২) শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ধানমণ্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে রুদ্র সরকার জ্বরে ভুগছিলেন। প্রাথমিক অবস্থায় তাঁর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়নি। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় আবার পরীক্ষা করা হলে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। কিন্তু এর মধ্যে কিডনি ও ফুসফুসে জটিলতা দেখা দেওয়ায় তাঁর মৃত্যু ঘটে।

এর আগে রাজধানীর আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসা, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ইসরা তাসকিন, একই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী মেহজাবিন সূহী ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশাত আজহারের মৃত্যুর ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

থেমে থেমে বৃষ্টি মশা প্রজননের উপযোগী

কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা এর মধ্যে অনেক ডিম পেড়েছে। বৃষ্টির পানি পেয়ে ডিমগুলো থেকে লার্ভা বেরোবে। এতে আরো নতুন এডিস মশা জন্ম নেবে, যা ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলছেন, থেমে থেমে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এটি মশা প্রজননের জন্য আরো উপযোগী। সুতরাং অবনতি যে হচ্ছে, সেটা বলা যায়। এ ছাড়া চলতি আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর পিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং ঢাকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে।

তিনি বলেন, এ মুহূর্তে মশা নিয়ন্ত্রণে জনসম্পৃক্ততা খুব প্রয়োজন। সমাজসেবামূলক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বাসাবাড়িতে যেসব স্থানে পানি জমে থাকে, সেখানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিককে নিতে হবে।

চলতি বছরে হাসপাতালে ৬১,৪৭৩ জন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল নতুন রোগীদের নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকায় চার হাজার ৫৬৮ জন। অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চার হাজার ৪৫৮ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এ পর্যন্ত ৬১ হাজার ৪৭৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।

এডিস মশা যেভাবে সংক্রমিত করে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাথমিকভাবে সংক্রমিত স্ত্রী এডিস এজিপ্টি মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছড়ায়। এই স্ত্রী মশা ডিম পাড়ার জন্য রক্তের প্রোটিন প্রয়োজন। ডেঙ্গুর জীবাণু আছে এমন কোনো মানুষকে কামড়ানোর পর একটি মশা সংক্রমিত হয়। এরপর ওই মশা আরেকজনকে সংক্রমিত করতে পারে।

এডিস মশা প্রতি তিন দিন পর পর ডিম দেয় এবং একটি স্ত্রী মশা তার জীবদ্দশায় ১৫০ থেকে ৩০০টি ডিম দিতে পারে। একটি ডিম প্রায় এক বছর পর্যন্ত নিষিক্ত না হয়ে থাকতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পানি পেলে যেকোনো সময় ডিম ফুটতে পারে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ জি এম সাইফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন বর্ষার মৌসুম চলছে। এটি আরো দুই মাস থাকবে বলা যায়। গতকাল থেকে যে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এতে এত দিন এডিস মশা যে ডিম পেড়েছে, সেগুলো পানি পেয়ে ফুটবে। এতে নতুন করে আরো এডিস মশা বাড়বে।

তিনি বলেন, এ ধরনের আবহাওয়ায় মশা কামড়ানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। অর্থাৎ ডিম পাড়া বেড়ে যায়। তখন বেশি বেশি কামড়ায়। আর মশা যত বেশি কামড়াবে, মানুষ তত বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হবে।

Share this post

PinIt
scroll to top