বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে এক ইউপি সদস্য বেতন তোলেন দুই প্রতিষ্ঠান থেকে, ভোটার আইডিও দুটি

UP-Member-20230804094103.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক বাগেরহাট প্রতিনিধি :-  বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে তথ্য গোপন করে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ও সম্মানীর টাকা তুলছেন এক ইউপি সদস্য। প্রায় দেড় বছর ধরে এ কাজটি করে যাচ্ছেন মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার ও ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. কামাল হোসেন।

পরিষদের মেম্বার হিসেবে প্রতি মাসে সরকারি কোষাগার থেকে তিনি সম্মানী নিচ্ছেন ৩ হাজার ৬০০ টাকা। অপরদিকে একই ইউনিয়নের মধ্য বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী পদে চাকুরির বিপরীতে নিয়মিত হাজিরা দেখিয়ে প্রতিমাসে নিচ্ছেন ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা।

বিশারীঘাটা গ্রামের নূর মোহাম্মদ খাঁনের ছেলে কামাল হোসেন ২০১৩ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী পদে চাকুরি নেন। এর পরে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে নির্বাচিত হন। মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পরে বিদ্যালয়ে লাইলী বেগম নামে এক নারী প্রক্সি দিচ্ছেন তার পদে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. কামাল হোসেন ২০০৮ সালে প্রথম ভোটার আইডি করেন। সেখানে তার নাম লেখা রয়েছে মো. কামাল হোসেন। পিতা-নূর মোহাম্মদ। জন্ম তারিখ-০১.০১.১৯৮৩।

এর পরে বিদ্যালয়ে দপ্তরী পদে চাকুরি নিতে প্রায় ১০ বছর বয়স কমিয়ে ২০১৩ সালে নিজের নাম ও পিতার নামে কিছুটা পরিবর্তন দেখিয়ে আরও একটি ভোটার আইডি করেন। সেখানে জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১৫.৭.১৯৯৪। নাম লেখা হয়েছে মো. কামাল হোসেন খান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন সার্ভার চেক করে বলেন, কামাল হোসেনের দুটি ভোটার আইডি সচল আছে। যার প্রথমটির নম্বর ০১১০৫২৮৩৮১০৫(২০০৮)। দ্বিতীয়টির নম্বর ০১১০৫২০০০১৭৪(২০১৩)। জন্ম তারিখ, নিজের নাম ও পিতার নামে কিছুটা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে।

দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ও সম্মানী গ্রহণের বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনের সময় সকল তথ্য দিয়েছি। তখন তো আমার নমিনেশন ফর্ম বাতিল করেনি। আমি নিয়মিত স্কুলে চাকুরি করি। পরিষদেও যাই। আমার অনুপস্থিতিতে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করেন। এতে কোন সমস্যা হয় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তার জানান, কামাল মাঝে মধ্যে থাকেনা। তখন তার পরিবর্তে লাইলী নামে এক মহিলা দায়িত্ব পালন করে। প্রতিমাসে কামালকেই নিয়মিত দায়িত্ব পালনের বিষয়ে প্রত্যয়ন দেওয়া হয়। প্রক্সির বিষয়ে লাইলী বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি চা-বিস্কুট আনার কথা বলে পালিয়ে যান।

মোরেলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব প্রভাংশু রায় বলেন, কামাল হোসেন খান এ পরিষদের মেম্বার এটুকুই জানি। সে পরিষদের সকল কার্যক্রমে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। অন্য কোথাও চাকরি করে কিনা তা জানা নেই।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, কামাল খান একটি বিদ্যালয়ে চাকুরি করে তা জানি। কিন্তু আর্থিক সুবিধা নেয় কিনা তা জানি না।

নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের করনিক দিপক কুমার দেবনাথ জানান, কামাল হোসেন মেম্বার হিসেবে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সরকারি অংশের সম্মানীর টাকা নিয়েছেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাটি কেউ জানায়নি। শোনার পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জবাব দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তারেক সুলতান বলেন, বিদ্যালয়ের দপ্তরী ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হিসেবে দুটি পদে একই সাথে দায়িত্ব পালন ও আর্থিক সুবিধা গ্রহনের সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share this post

PinIt
scroll to top