রহস্যময় শোডাউন জামায়াতের

jamat-20230804173030.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক ঢাকা প্রতিনিধি :-  অর্ধবেলা পুলিশকে ব্যস্ত রেখে দুপুরে ফাঁকি দিয়ে কর্মসূচি পালন
অনুমতি ছাড়াই মতিঝিল-মিরপুরে হাজারো নেতাকর্মীর বিক্ষোভ
আগামী ৬ আগস্ট সব জেলা শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা
জামায়াতের রহস্যাবৃত ভূমিকায় রাজনৈতিক দলগুলো বিস্মিত
নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত জামায়াতের কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে
সাইফুল হক
সাধারণ সম্পাদক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

গতকাল শুক্রবার ফজরের পর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশের কড়া পাহারা! ঘুরছে জলকামানসহ সাজোয়া যান। কোনোভাবেই জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। পুরো ঢাকাতেই কড়া নজর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এর মধ্যে পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে এবং পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত করে দেয় দলটি। বেলা ১১টায় রাজধানীর একটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হয়— প্রতিবাদে আগামী ৬ আগস্ট সব জেলা শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচির পালন করবে জামায়াত। এমন ঘোষণায় রাজধানীতে কিছুটা ঢিলেঢালা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা। তবে বেলা গড়াতে থাকলে জামায়াতে ইসলামীর রহস্যবৃত কর্মসূচির তৎপরতা বাড়তে থাকে অদৃশ্যরূপে। এক পর্যায়ে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্পটে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে বিক্ষোভে নেমে পড়ে দলটি। মতিঝিল এলাকায় বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন দক্ষিণের জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। মিরপুরে মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি রেজাউল করিম। পুলিশের অনুমতি ছাড়াই এমন ভূমিকা থেকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও বিস্মিত হয়।

রহস্যবৃত জামায়াতের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আমার সংবাদকে বলেন, সরকারের সাথে গোপন সম্পর্ক রয়েছে কি-না এটি তারাই ভালো জানে। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেনি। সভা সমাবেশ করার অধিকার আছে তাদের রয়েছে । অনুমতি না দিলে সরকারের ব্যাখ্যা থাকা দরকার, কেন দিচ্ছে না। নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত জামায়াতের কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে।

এদিকে রাজধানীতে শোডাউন থেকে দেয়া হয় সরকারকে হুঁশিয়ারি। জামায়াতের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি না মানলে এবং জামায়াতের কর্মসূচিতে অনুমতি না দিলে জামায়াত জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারকে সরাতে বাধ্য করবে। গণরোষে সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে উঠবে। গোটা বাংলাদেশে গণআন্দোলনে গড়ে তুলবে তারা। তাদের রাজপথে অবস্থান চলতে থাকবে। নেতাকর্মীদের রাস্তায় নেমে আসারও আহ্বান জানান তারা।

আরেকটি বামপন্থি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে কোট করে লেখা যাবে না, এমনি নাম প্রকাশ না করে লিখতে পারো। তিনি বলেন, জামায়াতের জন্ম থেকেই রহস্যময়। প্রয়োজনে তারা সবই করতে পারে। সাপের মুখেও চুমু খেতে পারে। জামায়াতের সঙ্গে সরকারের গোপন যোগাযোগ যে নেই তা কিভাবে বিশ্বাস করব। সরকারের গোপন সিগন্যাল নিয়েই তারা রাস্তায় নেমেছে। এ রহস্য অবশ্যই আগামী নির্বাচনে উন্মোচিত হবে বলে আমি মনে করছি।
কমলাপুরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে রাজপথে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। এই সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকবে। দলে আটক শীর্ষ নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। জনগণ ফুঁসে উঠেছে। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকর্মীদের সরকার নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে উদ্দেশ্যমূলক সাজা দিচ্ছে।

নুরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমরা শুক্রবার ছুটির দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। পুলিশ আমাদের সহযোগিতা দেয়নি। আমরা বাধ্য হয়ে ময়দানে নেমেছি। কারও সহযোগিতার জন্য জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচি বন্ধ থাকবে না।’ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করি। বিগত ১৫ বছর যাবৎ জামায়াতকে নির্মূল করার জন্য সরকার সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আওয়ামী লীগ প্রতিদিন মিছিল করে মিটিং করে, তাদের অনুমতির দরকার হয় না। অথচ আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কর্মসূচির জন্য বারবার অনুমতি চাওয়া হলেও পুলিশ অনুমতি দেয় না।’ সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘সংসদ ভেঙে দিন, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। দ্রব্যমূল্য কমান, জনদুর্ভোগ কমান, লুটপাট বন্ধ করুন। জনগণকে স্বস্তি দিন, মুক্তি দিন। অন্যথায় জনগণের মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গোটা বাংলাদেশে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। জনগণ ফুঁসে উঠেছে। জনগণ কেয়ারটেকার সরকারের দাবি আদায় করেই ছাড়বে।’ নির্বাচন নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে নুরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে আলাদা করার জন্য পরিকল্পিতভাবে রায় দেয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাদের জেলে পুরে রেখে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। জনগণ সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে।

মিরপুরে বিক্ষোভ শেষে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, অবিলম্বে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের গণদাবি মেনে নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সরকারের নির্দেশে প্রশাসন আমাদেরকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। তিনি সরকারের পতনের লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষ সবাইকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। অন্যথায় দেশ ও জাতিকে দুঃশাসন মুক্ত করা যাবে না। রেজাউল বলেন, চলমান সরকার পতনের আন্দোলনকে দমন করার জন্য হামলা, মামলা ও গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে। বাড়ি বাড়ি বেআইনি অভিযান চালিয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে বিরোধীদলীয় সমর্থকদের। এ জন্য মাঠে নামানো হয়েছে দলীয় হেলমেট বাহিনীকে। কিন্তু হামলা, মামলা ও গণগ্রেপ্তার চালিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না; বরং গণরোষে তাদের পতন অনিবার্য হয়ে উঠবে। নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই এই দাবি পাশ কাটানোর কোনো সুযোগ নেই। আর দলীয় সরকারের অধীনে এ দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণ এই জুলুমবাজ সরকার পতনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। যতদিন এই সরকারের পতন হবে না ততদিন তারা রাজপথ ছাড়বে না।

জানা যায়, ৪ আগস্ট রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে বাদ জুমা রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে নুরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি মতিঝিল থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলওয়ার হোসাইনসহ আরো অনেকে। এদিকে রাজধানীর মিরপুর-১ এ কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে বাদ জুমা হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়। মিরপুর-১ গোল চত্বর থেকে শুরু হয়ে টেকনিক্যাল মোড়ে এসে পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দিন, মুহিবুল্লাহ, জিয়াউল হাসান, আতাউর রহমান সরকার, নাসির উদ্দীন প্রমুখ।

এর আগে সকালে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আজকের সমাবেশ বাস্তবায়নে আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম। আমরা বারবার বলে আসছি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো ধরনের সংঘাত, সংঘর্ষে বিশ্বাসী নয়। প্রশাসন সহযোগিতার পরিবর্তে একটি সংঘাতমুখর পরিবেশের অবতারণা করেছে। তাই আমরা আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনের সমাবেশের কর্মসূচি স্থগিত করছি। এর প্রতিবাদে ৬ আগস্ট, রোববার বাংলাদেশের সব বিভাগীয় শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে জনগণের অংশগ্রহণ ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’

ডা. তাহের বলেন, ‘সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু সরকার জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত সরকার দলন, পীড়ন, গ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনের নামে প্রহসন করে যেনতেনভাবে আবারো ক্ষমতায় আসতে চায়। দেশের জনগণ সরকারের এই ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না।’

Share this post

PinIt
scroll to top