দেশের তথ্য ডেস্ক কুমিল্লা প্রতিনিধি :- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলায় এক স্বাক্ষীকে ডেকে শেষপর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত কর্মকর্তা অসুস্থতার কথা বলে সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত করেছেন বলে জানিয়েছে তনুর পরিবার।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সকাল ১০টায় কুমিল্লা নগরীর হাউজিং এস্টেট পিবিআই কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ে হত্যা মামলার স্বাক্ষী লাইজু জাহানকে আসতে বলা হয়েছিল। লাইজু জাহান নিহত তনুর খালাতো বোন।
ঘটনার দিন লাইজু কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুদের বাসায় ছিলেন। এর আগেও তাঁকে একাধিকবার নানা সংস্থা ডেকে নানা বিষয় জানতে চেয়েছিলো। মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, সাক্ষ্য দিতে গত ২৪ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত নোটিশ তনুর খালাতো বোন লাইজু জাহানের মুরাদনগরের মীর্জাপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
সাক্ষ্য দিতে লাইজু বুধবার কুমিল্লায় আসেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় লাইজু, তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল পিবিআই অফিসে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
সাক্ষ্যগ্রহণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মামলার বাদী তনুর বাবা বলেন, ‘৭ বছরে আর কতো সাক্ষ্য দিতাম? যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে রহস্য বের হতো, তাদেরই তো এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না।
আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন এমনকি শিক্ষকরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন, আর কি বাকী রইল?’
তিনি আরো বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত বলে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়েছে। একদিন আগে আমাদের মোবাইল ফোনে তা জানিয়ে দিলে হতো। এটা হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না।
বৃহস্পতিবার রাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকার দক্ষিণ কল্যাণপুরের পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার প্রচণ্ড জ্বর। ধারণা করা হচ্ছে ডেঙ্গু সংক্রমণ।
সুস্থ্য হওয়ার পর লাইজুর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। মামলাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা তদন্তে কোন অবহেলা করছি না।’
তনুর পরিবার বলছে, বর্তমান তদন্ত সংস্থা দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০২০ সালের নভেম্বরে ঘটনাস্থলে এসেছিল। দীর্ঘ আড়াই বছর পর পিবিআই নোটিশ দিয়ে এ মামলায় তৎপর হয়েছিল। এখন নোটিশ দিয়ে স্বাক্ষীকে ডেকে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, লাইজুকে আর কতবার জিজ্ঞেস করা হবে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মরার আগে মেয়ের খুনিদের চেহারা দেখা হবে না। বিচারতো দূরের কথা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের ঝোপজঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার ঘটনায় ২১ মার্চ বিকেলে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তনু হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পার হয়েছে। কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। এরই মধ্যে পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন। কোনো কিনারা করতে পারেনি বর্তমান তদন্ত সংস্থা পিবিআইও।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলামকে। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম মনজুর আলমকে। তৃতীয়বার ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সিআইডির কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম বিষয়টি তদন্ত করেন।
এরপর ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জালাল উদ্দিন আহম্মদ চার বছরের অধিক সময় এই মামলার কিনারা করতে পারেননি। সবশেষ ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে পিবিআই ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়।