দেশের তথ্য ডেস্ক ঢাকা প্রতিনিধি :- তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ নানা দাবিতে ঢাকায় সমাবেশ করতে চাইলেও পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশের তারিখ পিছিয়েছে জামায়াত। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৪ আগস্ট ঢাকায় সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করেছে ধর্মভিত্তিক দলটি।
আজ মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেপ্তার সব নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর (উত্তর ও দক্ষিণ) উদ্যোগে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। আজকের সমাবেশ বাস্তবায়নে আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম।
আমরা আশা করেছিলাম, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী কোনো দলের পক্ষ না হয়ে জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, ডিএমপি কমিশনার আমাদেরকে সমাবেশ না করার জন্য মৌখিকভাবে জানানোর পাশাপাশি ডিএমপির মতিঝিল জোনের উপপলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামায়াতকে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা যদি ডিএমপির সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে সমাবেশ বা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতির প্রয়োজন নেই। সভা-সমাবেশ করা সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। সংবিধানের ৩৭ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।’
তিনি বলেন, সংবিধান প্রদত্ত এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আমরা আরো লক্ষ্য করছি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ করে যাচ্ছে; কিন্তু সরকার জামায়াতে ইসলামীকে অন্যায়ভাবে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। যা আইনের শাসনের পরিপন্থি ও মৌলিক অধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। বারবার সহযোগিতা চাওয়ার পরও সরকার সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না।
আমরা বারবার বলে আসছি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো ধরনের সংঘাত, সংঘর্ষে বিশ্বাসী নয়। দীর্ঘ ১০ বছর পর গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে স্বল্প সময়ের নোটিশে সমাবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সেই দিন একটি সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ ঐতিহাসিক সমাবেশ উপহার দিয়েছিল। যা দেশে বিদেশে সমাদৃত হয়েছিল। এ বারও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চেয়েছি। কিন্তু সরকার আমাদের সমাবেশ করতে না দিয়ে চরম অন্যায় করেছে। আমরা আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল দাবি করে বলেন, আসলে এই সরকার স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ মিছিল-সভা সমাবেশ করার অধিকার রাখা হয়েছে। সংবিধান স্বীকৃত এই অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। যেহেতু সংবিধানে মিটিং-মিছিল করার কথা বলা হয়েছে, তাই মিটিং-মিছিলে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জনগণের দাবি আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে বদ্ধপরিকর। আমাদের এই দাবি আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।
আমরা আবারো পুলিশ প্রশাসনের সংবিধান ও গণতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কোনো দল বিশেষ নয়, দেশের পক্ষে, জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে প্রশাসনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কোনো দল চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না। তাই কোনো দল বিশেষের নয়, দেশ ও জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন করার জন্য আপনাদের আবারো আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা.ফখরুদ্দিন মানিক, দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমন।