জুলাইতে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ৪১ মামলা সহিংসতায় নিহত ৪ : এমএসএফ

MSF-31072023-01.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক-  চলতি জুলাই মাসে দেশে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, গায়েবি মামলা ও পুলিশী বলপ্রয়োগের ঘটনা বেড়েছে। এ সময় রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৭৬৯ জন। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৪ জন। আহত হয়েছেন ৭৬৫ জন। এছাড়া বিরোধী দলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা হয়েছে ৪১টি। এসব মামলায় ১২ হাজার ৭০২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) দেওয়া জুলাই মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সোমবার সংগঠনের প্রতিষ্ঠতা সভাপতি সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এ প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পঠানো হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যেম প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এই মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে এমএসএফ।

প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় এমএসএফ গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এসব ঘটনা রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তারও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি প্রত্যেকটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে সরকার দলীয় ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহিংসতা, হানাহানি ও হতাহতের ঘটনায় নাগরিক জীবনে উৎকণ্ঠা বেড়েছে। এ সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন দু’জন। এ ছাড়া এক শিশুও একজন নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তিনজন বিরোধী দলীয় কর্মীকে তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অপর একটি ঘটনায় একই পরিবারের শিশুসহ তিন সদস্যকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এক মাস পর মামলা দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জুলাই মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে এমএসএফের প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়। আর নিহত চারজনের মধ্যে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তি কৃষক দলের কর্মী এবং তিনজন যুবলীগের কর্মী।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফের সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে রাজনৈতিক, নির্বাচনী সহিংসতা ও সভাসমাবেশে বাধার ৪৬টি ঘটনায় বিএনপি’র বিরুদ্ধে ৪১টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১২ হাজার ৭০২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে ২ হাজার ১৭৪ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। ১১৯ জনের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ মামলাগুলোতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০ হাজার ৫২৮ জনকে।
এ মাসে ৪১টি রাজনৈতিক মামলার মধ্যে ৩৭টি বিএনপি’র বিরুদ্ধে; ২টি বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীর বিরুদ্ধে; ২টি মামলা করা হয়েছে বিএনপি ও বাংলদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যুক্তভাবে। মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ ৩৩টি, আওয়ামী লীগ ৫টি, আইনজীবী ২টি এবং সরকারি বাঙলা কলেজের অফিস সহকারী করেছেন বিএনপি’র বিরুদ্ধে ১টি মামলা।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসে বিএনপির ১৩ জন কর্মীকে ভবঘুরে হিসেবে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারায় ভবঘুরে, অভ্যাসগত ইত্যাদি অপরাধে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে, তাদের প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা রয়েছে বলে বিএনপি দাবি করেছে। দলটি বলছে, রাজনৈতিক কর্মীদের ভবঘুরে হিসেবে গ্রেফতার এক নতুন আলামত।
জুলাই মাসে ৪১টি রাজনৈতিক মামলায় মোট ১ হাজার ৩৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১ হাজার ১০৭ জন বিএনপি’র, ৯১ জন জামায়েত ইসলামীর কর্মী। আর ৩ যুবক যাঁরা ঢাকায় যাচ্ছিলেন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিদেশ যাবেন বলে এবং ১৬৩ জনের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ক্ষমতাসীন দলের সংঘাত-হিংস্রতা নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিকার ভূমিকার বিপরীতে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে অতি উৎসাহী অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। এতে করে সুষ্ঠু রাজনীতি করার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা কমছে।’
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাঁচটি মামলায় পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বিএনপি’র কর্মী এবং একজন সাধারণ যুবক রয়েছেন। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির অভিযোগ রয়েছে। অপর তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রতারণার অভিযোগে। এ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাভার থানায় দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জুন মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সাতটি মামলায় দু’জন গ্রেফতার হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও মতামত প্রকাশের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
এমএসএফ মনে করে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া ও অপহরণের অপতৎপরতাগুলো গুরুতর অপরাধ ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। অপরাধ দমনে আইনসিদ্ধ পথ অবলম্বন না করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ হেন আচরণ নাগরিক জীবনে চরম উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ক্রমাগত আস্থাহীনতা বেড়ে চলেছে, যা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।

Share this post

PinIt
scroll to top