দেশের তথ্য ডেস্ক :- আন্তর্জাতিক বাজারে দীর্ঘ সময় ঊর্ধ্বমুখী থাকা ডলারের দাম আবার কমতে শুরু করেছে। আবুধাবিভিত্তিক দ্য ন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ডলারের দাম এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দরে এসেছে। নিম্নমুখী এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ তার নীতি সুদহার হার ০.২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়েছে।
এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে যে এই বছরের শেষের দিকে আরো একবার সুদের হার বাড়ানো হবে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন, সুদের হার হয়তো আর বাড়ানো হবে না, বরং ফেড সুদের বর্তমান হার বজায় রেখেই মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। এতে ডলারের দাম শিগগিরই বাড়ছে না বলে বিনিয়োগকারীদের অনুমান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা সূচক অনুযায়ী পাউন্ড, ইউরো, ফ্রাঁ, ইয়েনসহ বিশ্বের বড় মুদ্রাগুলোর বিপরীতে এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডলারের মূল্য পড়েছে ৩.২ শতাংশ।
গত বছরের তুলনায় পড়েছে ৭.৭ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমে আসছে, যা ফেডের সুদের হার বৃদ্ধি থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত। ফলে ডলারের দাম পড়তির দিকে থাকবে। গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রে বার্ষিক ভোক্তা মূল্যসূচক কমে হয় ৩ শতাংশ, যা মে মাসের ৪ শতাংশ থেকে কম।
যেখানে ২০২২ সালের জুনে দেশটির ভোক্তা মূল্যসূচক ছিল ৯.১ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে ফেড গত ১৬ মাসে মোট ৫০০ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার বাড়ায়। ফেডারেল রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়। ফলে সেই লক্ষ্যে তারা অনেকটাই সফল। এ বিষয়ে ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মার্ক হায়ফেলে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির ডাটা থেকে বোঝা যাচ্ছে, ডলারের পতন অব্যাহত থাকবে।
’
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বরে ডলারের দাম দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল। এর পেছনে মূল কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ। কিন্তু এরপর এলো মন্দার আশঙ্কা, তিনটি আঞ্চলিক ব্যাংকের পতন এবং কংগ্রেস সদস্যদের বাকযুদ্ধ ও সরকারের ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ।
তবে এখন যখন মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী, ফেডারেল রিজার্ভ তখন সুদের হার বাড়ানোর ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডলার শেষ পর্যন্ত হয়তো একটি টেকসই স্তরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক আর্থিক সেবাদানকারী কম্পানি চার্লস শোয়াবের স্থায়ী আয়বিষয়ক প্রধান কৌশলী ক্যাথি জোনস বলেন, ‘শহরের একমাত্র আকর্ষণ হিসেবে ডলার তার চাকচিক্য খানিকটা হারিয়েছে।’
ডলারের দাম কমে যাওয়া অবশ্য কিছু মার্কিন কম্পানির জন্য শাপেবর হতে পারে। ফলে এসব কম্পানির আয় বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিদেশ থেকেই বেশির ভাগ আয় আসে এমন বেশ কিছু প্রযুক্তি কম্পানি গত বছর শক্তিশালী ডলারের কারণে সমস্যায় ছিল। এসব কম্পানির মধ্যে ছিল সেলসফোর্স, মাইক্রোসফট ও অ্যাপল।
তা সত্ত্বেও এ বছর শেয়ারবাজার চাঙা ছিল প্রযুক্তি কম্পানিগুলোর কল্যাণে। ডলার দুর্বল হলে প্রযুক্তি কম্পানিগুলোর আয় আরো বাড়বে। ফলে এসব কম্পানির শেয়ারের দাম বাড়বে এবং শেয়ারবাজারের চাঙাভাব বজায় থাকবে। তবে ক্যাথি জোনস মনে করেন, দুর্বল ডলারের কারণে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়লেও এই সুবিধা হবে সাময়িক। অন্যদিকে প্রিন্সিপাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চিফ গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিস্ট সীমা শাহ বলেন, ‘ডলারে দাম খুব বেশি কমার সুযোগ নেই।’