দেশের তথ্য ডেস্ক টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :- টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত আহ্বায়ক রুমান খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জিন্দাবাদ’। এ নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা ও ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
রুমান খানের বাবা মো. আওলাদ হোসেন জানান, তার ছেলে লেখাপড়া করে না। দেওহাটা এলাকার ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে মাটির ব্যবসা করেন।
জানা গেছে, গত ২১ জুলাই উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। গত ২৬ জুলাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, সাফি আহমেদ সীমান্ত, শুভ আহমেদ ও মারুফ রহমান স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে রুমান খানকে আহ্বায়ক ও চারজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১৭ জনকে সদস্য করে তিন মাসের জন্য বহুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। এতে অন্য তিন যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াকিল আহমেদ, জিহাদ হাসান ও ফয়সাল শিকদার স্বাক্ষর করেননি।
রুমান খান আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়ে ২৭ জুলাই বিজয় মিছিলের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। এতে লেখেন, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জিন্দাবাদ।’
বহুরিয়া ইউনি ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত আহ্বায়ক রুমান খানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এক ছোট ভাইকে দিয়ে ছবি ও লেখা পোস্ট করেছিলাম। সে লিখেছিল।
পড়ে ডিলিট করেছি। কোনো বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন জানতে চাইলে বলেন, ওপর থেকে বলা নিষেধ আছে। আপনি এসে আমার সার্টিফিকেট দেখে যান।’
রুমান খানের বাবা মো. আওলাদ খান বলেন, আমার তিন ছেলে। বড় ছেলে শামীম ব্যবসা করে।
মেজো ছেলে আরমান কৃষিকাজ করে। ছোট ছেলে রুমান খান দেওহাটা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে মাটির ব্যবসা করে। রুমান এসএসসি পাস করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, করেনি। আমার ছেলে ডাক দিলেই ১০০-২০০ ছেলে জড়ো করতে পারে।
বহুরিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক নেতা মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, আমার জানা মতে রুমান খান ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে।
গোহাইলবাড়ি সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক জানান, রুমান খান ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় কয়েক দিন বিদ্যালয়ে এসেছে। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল কি না আমার মনে পড়ে না।
বহুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. লিটন মিয়া জানান, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে আমরা অবগত নই।
মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের তিন যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াকিল আহমেদ, জিহাদ হাসান ও ফয়সাল শিকদার জানান, বহুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মিসভা সম্পর্কে আমরা অবগত নই। অছাত্র রুমান খানকে আহ্বায়ক এবং সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফাহিম মোনায়েমকে সদস্য পদ দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির একাংশ বহুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। তৃণমূল ছাত্রলীগ তাদের সঙ্গে নেই। পাল্লা ভারী করতে অছাত্র ও অপ্রাপ্তদের দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করছেন। এতে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে তারা জানান।
মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সিয়াম জানান, যাকে বহুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে আমার জানা মতে তার ছাত্রত্ব নেই। শুধু তাই নয়, তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জিন্দাবাদ।’ জয় বাংলা এবং জিন্দাবাদ সম্পর্কে জানতে হবে। যা ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের শিষ্টাচারবহির্ভূত। এতে কোনোভাবেই তার পদ-পদবি থাকতে পারে না। বিষয়টি খুব পীড়াদায়ক।
মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন খান জানান, একজন ছাত্রলীগ নেতা কিভাবে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জিন্দাবাদ’ লিখে স্ট্যাটাস দেন আমার বোধগম্য নয়। ছাত্রত্ব না থাকার পরও শুধু ব্যক্তি পছন্দের হওয়ায় রুমান খানকে আহ্বায়ক পদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খুবই আপত্তিকর।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদ ও যুগ্ম আহ্বায়কদ্বয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযাগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদ ইকবাল বলেন, যারা রক্তের ছাত্রলীগ তাদের মুখে জিন্দাবাদ আসতে পারে না। এতে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্তর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমি রুমান খানকে চিনি না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার স্ট্যাটাসটি দেখে বহুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা রুমান খানের পরিবার বিএনপির সমর্থক বলে জানিয়েছেন। এমন নেতৃত্ব ভবিষ্যতে দলের জন্য শুভ নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।