দেশের তথ্য ডেস্ক রামপাল প্রতিনিধি :- বাগেরহাটের রামপালে বিএনপি-জামায়াতের ৩০ নেতা-কর্মীর নাম উলেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে নাশকতার মামলা দিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রামপাল থানায় বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দায়ের করেন ফয়লা পুলিশ ক্যাম্পের এসআই খন্দকার আব্দুল মবিন।
মামলায় ঢাকায় বিএনপি’র মহাসমাবেশ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে নাশকতামূলক কার্যক্রম সংগঠিত করতে ককটেল, লোহার রড, হাসুয়া ও বাঁশের লাঠি নিয়ে গোপন বৈঠক করার কথা উলে¬খ করা হয়েছে। তবে মামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট উলেখ করে এটিকে ‘গায়েবি মামলা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
বৃহস্পতিবারের মামলায় ঘটনাস্থল হিসেবে উলে¬খ করা হয়েছে রামপাল উপজেলার গোবিন্দপুর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ। এজাহারে বুধবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে আসামিরা সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়ে উলে¬খ করে সেখান থেকে চারটি অবিস্ফোরিত ককটেলসহ ৮ জনকে গ্রেফতারের কথা বলা হয়েছে।
ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছেই বসবাসরত দুই ব্যক্তির সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। রাত ১০টার আগে থেকেই তারা তাঁদের বাড়িতে ছিলেন। তবে কোন প্রকার বিস্ফোরণের শব্দ না পাওয়ার কথা বলছেন তাঁরা। ওই মামলায় আটক গৌরম্ভা ইউনিয়ন পরিষদ ইউপি সদস্য সদস্য মোঃ আব্দুল হালিমকে এজাহারে উলেখিত সময়ের অন্তত ৮ ঘন্টা আগে বুধবার দুপুরে রামপাল উপজেলার প্রশাদনগর বাজার থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
আব্দুল হালিমের ছেলে মোঃ মহিবুল¬াহ আল সাকিব বলেন, তার বাবা গৌরম্ভা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জামায়তে ইসলামের রাজনীতিতে জড়িত। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে তাকে আটক করে রাতে ককটেল ফাটানোর মিথ্যা অভিযোগে করা মামলায় আমার বাবাকে আটক করা হয়েছে। আমি তাঁর মুক্তি চাই।
একই রকম কথা বলেছেন বাইনতলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক নেতা সাগরের স্ত্রী উর্মি বেগম। তিনি বলেন, তার স্বামী দুপুরে ভাত খাওয়ার পর ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তিনি জানতে পারেন রাতের একটি বিস্ফোরক মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে আদালতে চালান দিয়েছে পুলিশ।
এদিকে গেল বুধ ও বৃহস্পতিবার বাগেরহাটের বিভিন্ন থানা পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের অন্তত ২৫ নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তাদের অধিকাংশকে ইতপূর্বে দায়ের করা বিভিন্ন নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
রামপাল উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক হাফিজুর রহমান তুহিন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের ৮ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়েছে। আমাদের কর্মীরা হামলা-মামলার কারনে এমনিতেই বাড়িতে থাকতে পারেন না। আবার নতুন করে মিথ্যা মামলা দিয়ে আট জনকে আটক করা হলো।
বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গেল কয়েক দিন ধরে জেলা জুড়ে গ্রেফতার অভিযান করছে পুলিশ। নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তাদের খুঁজছে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার রামপাল উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মুজিবর রহমান বাবুল, গৌরম্ভা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি হেমায়েত শেখ, বাইনতলা ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রনেতা হুমায়ুন কবির সাগরসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে।
জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এড. শেখ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে পুলিশ জেলা জুড়ে নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান করছে। পুলিশ বুধবার গৌরম্ভা ইউনিয়নের প্রসাদনগর এলাকার ইউপি সদস্য আঃ হালিম, রাজনগর এলাকার নজিবর রহমান, সোনাতুনিয়া থেকে আলাউদ্দিন ও মোজামকে আটক করে নতুন করে গায়েবি মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের কাউকে ফয়লা, কাউকে গৌরম্ভা, কাউকে হুড়কা থেকে ধরে নিয়ে মামলার অভিযোগে লেখা হয়েছে তারা নাকি নাশকতার পরিকল্পনা করছিল।
রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম. আশরাফুল আলম বলেন, নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টাকালে কিছু দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আট জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।