দেশের তথ্য ডেস্ক ঢাকা প্রতিনিধি :- বায়তুল মোকাররমে আ.লীগ নয়াপল্টনে বিএনপি
২৩ শর্তে দুই দলকে মহাসমাবেশের অনুমতি
বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণা আসবে টানা কর্মসূচির
লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনসমুদ্রের টার্গেট আওয়ামী লীগের
বহিরাগতদের নিয়ে প্রশাসনে দুশ্চিন্তা
অনড়! রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বড় দুই দল। প্রশাসনের আহ্বানেও গোলাপবাগ যায়নি বিএনপি। একদিন পিছিয়ে বুধবার রাতে ঘোষণা দেয়া হয় আজ শুক্রবার নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে দলটি। গতকাল রাতে পুলিশ পুরো ঢাকায় অভিযান চালায়। বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে। তবুও ভীতিকর দৃশ্যপট তৈরি হয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল হলেই শতশত নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঝড়ো হতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিলেও ফের সামনের দিকেই এগোতে থাকেন নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নিচে নেমে এসে নেতাকর্মীদের অনুরোধ করেন পল্টন ছাড়তে। উত্তেজিত হয়ে নির্দেশও দেন সরে যেতে। এতেও কাজ হয়নি। তিন ঘণ্টা পর্যন্ত পল্টন এলাকায় পুলিশ বারবার রাউন্ড দিয়ে গাড়ির শোডাউন দিয়েও নেতাকর্মীদের সরাতে পারেনি। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি প্রায় ১৫ মিনিট চেষ্টা করেছেন নেতাকর্মীদের সরাতে। কিন্তু পারেননি। একপর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে তিনিও উপরে চলে যান।
এর মধ্যেই সুর বদলে গেলো আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন— যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের। তারা রাজধানীর পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে শান্তি সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিলেও বিএনপির অবস্থান দেখে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের আগের সিদ্ধান্তেই ফিরে আসেন। সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে মঞ্চ তৈরি করতে লাগলেন। প্রধান দুই দলের এমন শক্ত অবস্থান ও রণপ্রস্তুতি দেখে পুলিশ প্রশাসনকে ভাবতে হয়েছে। কর্মসূচিকে ঘিরে গত তিন দিন পুরো রাজধানীবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে চিন্তা করতে হয়েছে। অনুমতি না দিলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে পারে। বিএনপির তৃণমূল থেকে লাখো নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে পড়েছে অনেকে কাপড় চোপড় নিয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে এমন খবর ছিল গোয়েন্দাদের কাছেও। তার উপর আন্তর্জাতিক মহলও ঢাকায় নজর দেন। পুলিশকে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা ছাড়া উপায় ছিল না। তাই সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা যেন সংঘাতের দিকে না গড়ায়, সে জন্য পুলিশ দুপক্ষকেই ২৩টি শর্ত বেঁধে দিয়ে বিকেল ৪টার দিকে পছন্দের জায়গায় অনুমতি দিয়ে দেয়।
গোয়েন্দা সংস্থার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিএনপির তৃণমূল থেকে যারা ঢাকায় চলে এসেছে তাদের নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা নেই বিএনপির হাইকমান্ডেরও। যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি তৈরি হলে সামাল দেয়ার মতো পর্যাপ্ত ফোর্সও ঢাকায় নেই। আশুরাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় তাজিয়া মিছিল হচ্ছে পুলিশকে সেখানে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই ঢাকাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে রাজনৈতিক দলের পছন্দকে অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে। তবে বড় দলের শোডাউনকে ঘিরে আজ ঢাকাতে কী হতে যাচ্ছে— তা নিয়ে উত্তেজনা এখনো রয়েই গেছে। ব্যাপক শোডাউনকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানামুখী শঙ্কাও। একই দিনে সমাবেশ ও মহাসমাবেশ করার ঘোষণায় একদিকে যেমন তীব্র যানজটের আশঙ্কা রয়েছে, তেমনি জনমনে শঙ্কা রয়েছে সংঘাত-সহিংসতারও। বিএনপির এই মহাসমাবেশের টার্গেট আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে চাপে ফেলে দাবি আদায় করা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের টার্গেট অতীতের মতো রাজপথেই বিএনপিকে মোকাবিলা। বিএনপি আজকের মহাসমাবেশ থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। বিপরীতে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। আজ লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতির মাধ্যমে সরকারকে নতুন আল্টিমেটাম দেবে। বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে, তা ক্ষমতাসীনদের আচরণের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর কয়েকজন নেতা জানান, সরকার যদি মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করতে দেয়, তাহলে তাদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে আল্টিমেটাম দেয়া হবে। আল্টিমেটামের সময় হবে সংক্ষিপ্ত। দাবি না মানলে ঘেরাওসহ আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টানা কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। প্রথমে নির্বাচন কমিশন, পরে সচিবালয় এবং মন্ত্রীপাড়া ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। আর যদি সরকার মহাসমাবেশ ভণ্ডুল করতে চায়, তাহলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সে ক্ষেত্রে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচিও ঘোষণা হতে পারে। একই সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সমাবেশেরও কর্মসূচি আসতে পারে। মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করে বড় ধরনের শোডাউনের কথা জানিয়েছেন বিএনপির আয়োজকরা। তাদের দাবি— মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে দুই থেকে তিন লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। অন্যদিকে, রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনও। বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে তাদের শান্তি সমাবেশে লাখ লাখ নেতাকর্মীর সমাগম ঘটিয়ে রীতিমত জনসমুদ্রে পরিণত করার কথা জানিয়েছে আয়োজকরা। শুধু শান্তি সমাবেশই নয়, শুক্রবার মহানগরীর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক ও শান্তি অবস্থানে থাকারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছি। ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টর বিচারপতিরা সেখানে যাবেন। আমরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার জায়গায় মঞ্চ তৈরির কাজও করছিলাম। কিন্তু এসএসএফ থেকে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার বিষয় তোলায় মঞ্চ তৈরির কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’ বিএনপির সভা সমাবেশের দিন পাল্টা কর্মসূচি পালন করা থেকে বিরত থাকতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। পাশাপাশি বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় আসতে থাকা নেতাকর্মীদের বাধা না দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আব্বাস বলেন, ‘উল্টো গুলি হামলা করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো উসকানিতে পা দেইনি।’ একটি কথা পরিষ্কার বলতে চাই, বিএনপি কখনো অশান্তি হয়, এমন কর্মসূচি পালন করে না।