সুন্দরবনে বিএলসি নবায়নে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ, বনকর্মকর্তাদের অস্বীকার

Sundarban-001.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক সুন্দরবন প্রতিনিধি :-  দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর গত ২১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া আহরণের বিএলসি নবায়ন কার্যক্রম। কিন্তু এই কার্যক্রমে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন ৪টি স্টেশনে কর্মকর্তারা বিএলসি ধারী জেলেদের কাছ থেকে প্রতিটি বিএলসি থেকে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি বিএলসিতে ৩০ টাকার স্থলে নেয়া হচ্ছে এক হাজার টাকা। তবে বনবিভাগের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছর সরকারিভাবে জেলেদের পুরাতন বিএলসি নবায়ন শুরু হয় ১ জুলাই থেকে। যা চলমান থাকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। কিন্তু বনবিভাগ এবার গত ২১ জালাই থেকে বিএলসি নবায়ন করা হবে বলে উপকূল সংলগ্ন হাটবাজারে মাইকিং করছেন। এছাড়া বনবিভাগের প্রতিটি স্টেশন অফিসে নিয়োজিত দালালদের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে এবার বিএলসি নবায়ন করতে এক হাজার টাকা করে দিতে হবে। আর এই অবৈধ টাকা আদায়ে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কবাদক, বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা ও কৈখালি এই ৪টি স্টেশনের প্রতিটিতে একাধিক দালাল রয়েছে। এসব দালালরা গোপনে বৈঠক করে ইতিমধ্যে জেলেদের বিএলসি নবায়নে ১ হাজার টাকা নেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে।

শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জের জেলেপাড়ার জেলা আদম আলীসহ প্রায় ৪০/৫০ জন জেলে গত ২২ জুলাই কদমতলা অফিসে বিএলসি নবায়নের জন্য গেলে অফিসে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জেলেদের কাছে বিএলসি প্রতি ১ হাজার টাকা করে দাবি করেন। এ সময় জেলেরা টাকা কমিয়ে নেয়ার কথা বললে তাদেরকে অফিস থেকে বের করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ।

এ বিষয়ে কদমতলা স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ ফজলুল হক জানান, গত ২২ জুলাই একটি প্রশিক্ষণে আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। অতিরিক্ত টাকা দাবি করার অভিযোগের বিষয়টি স্থানীয় এমপি আমাদের ডিএফও স্যারকে জানালে আমি ২৪ তারিখে ঘটনাটি জানতে পারি। পরে অবশ্য বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। যারা অতিরিক্ত টাকা দাবি করেছিল তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। জেলেদেরকে বলা হয়েছে তারা নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে বিএলসি নবায়ন করতে পারবেন।

বনবিভাগ সূত্র জানায় জানায়, প্রতি ৩ মনে এক ইউনিট হিসাবে ১০ টাকা হারে সরকারি রাজস্ব নেয়া হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ১০০ মনের একটি নৌকায় সরকারি রাজস্ব দাঁড়ায় প্রায় ৩৩০ টাকা। এছাড়া বিএলসি প্রদানের আগে সংশ্লিষ্ট স্টেশন অফিসে নিয়ে নৌকার ধারণ ক্ষমতার পরিমাপ নির্ধারণ করে সরকারি রাজস্ব আদায় করা হয়ে থাকে। এটা সাধারণত গোলপাতা বা গরান কাঠ কাটার নৌকার ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
এদিকে জেলেরা বলছেন, অধিকাংশ মাছ ও কাঁকড়া আহরণের নৌকায় স্বাভাবিক ভাবে ২৫ মণ পরিমাপের হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি নৌকায় রাজস্ব দাঁড়ায় ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা। কিন্ত বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে চলতি ২০২৩ ও ২৪ অর্থবছরে জেলেদের কাছ থেকে প্রতিটি ২৫ মণের নৌকার বিএলসি নবায়নে ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
শ্যামনগরের গাবুরা জেলে আমিনুর রহমান, বুড়িগোয়ালিনীর শফিকুল, মুন্সীগঞ্জ সর্দারপাড়া মন্টু মন্ডল, কেদার মন্ডল, চুনকুড়ি গ্রামের চন্দ্রকান্ত মন্ডল, হরিনগর গ্রামের কামরুল, কৈখালির মিজানুর, মিরগাং গ্রামের আবুল, মুন্সীগঞ্জ জেলেপাড়ার সুবাস মন্ডল, আদম আলী জানান, ২০২৩ সালে বিএলসি নবায়নে ১০০ মণের নৌকা বিএলসি নবায়নে এক হাজার টাকা বনবিভাগকে দিতে হবে বলে তাঁদের নিয়োজিত দালালদের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে।
অপর দিকে সুন্দরবনে দায়িত্বরত বনবিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নানা খাতওয়ারি সীমাহীন ঘুষ-বাণিজ্য দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। তাদের ঘুষ-বাণিজ্য ব্যাঘাত হলে নানান অজুহাত খাড়া করে জেলে-বাওয়ালিদের উপর নির্যাতন চালায় এবং তাদের নিয়োজিত দালালদের মাধ্যমে বন মামলা দেওয়ারও হুমকি দেয়া হয়। ফলে জেলে-বাওয়ালিরা জীবন-জীবিকার তাগিদে তাদের দাবি মানতে বাধ্য হয়। দিতে হয় দাবিকৃত ঘুষের টাকা।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) কে এম ইকবাল হোসেন জেলেদের বিএলসি নবায়নে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রতি ৩ মনে এক ইউনিট হিসাবে ১০ টাকা হারে সরকারি রাজস্ব নেয়া হয়ে থাকে। বিএলসি নবায়নের আগে জেলেরা তাদের নৌকা বনবিভাগের অফিসের ঘাটে নিয়ে আসে। নৌকা পরিমাপ করে নির্ধারিত রাজস্ব নেয়া হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, জেলেদের বিএলসি নবায়নে কারো বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্টেশন অফিসে কোন দালালকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া হয় না। কেউ বন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙানোর চেষ্টা করলে তিনি অফিসে তথ্য দিতে অনুরোধ জানান।

Share this post

PinIt
scroll to top