ঢাকার রাজপথের হিসাব-নিকাশ! বড় দুই দলে রণপ্রস্তুতি।

rahim-20230726182449.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক ঢাকা প্রতিনিধি :-  ঢাকার রাজপথের হিসাব-নিকাশ! বড় দুই দলে রণপ্রস্তুতি। আগামীকাল বিরোধীদলের মহাসমাবেশ আর ক্ষমতাসীন দলের শান্তি সমাবেশ। উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। কাল ঢাকায় কী হবে— এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ। বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার নজরও রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাজনীতিতে খুলছে নতুন অধ্যায়। ফাইনাল খেলার সূচনা করবে বিরোধীরা। লাখো লোকের জনসমাগম করা হবে। বিশ্ব নজরে আসার বড় শোডাউন দেখানো হবে। বসে নেই আওয়ামী লীগও, তারাও বিএনপির চেয়ে অধিক লোকের উপস্থিতির টার্গেট নিয়েছে। গত তিন দিন ধরে চলছে বড় দুই দলের সিরিজ বৈঠক। মুখোমুখি কর্মসূচিতে সংঘাতের খবর রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পরিকল্পনা সাজিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকার প্রবেশমুখে কড়াকড়ি আরোপ। সন্দেহজনক ব্যাক্তিদের তল্লাশি করা হয়। দুপুর থেকে দেখা গেছে, বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের অবস্থান। রয়েছে জলকামান গাড়ি, কিছুক্ষণ পর পুলিশের রেকারও ঘুরেছে।

বিএনপি রাজধানীর নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে শক্ত অবস্থানে থাকলেও পুলিশের পক্ষ থেকে না জানিয়ে সায়েদাবাদের গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ করার জন্য পরামর্শ দেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। এ নিয়ে রাত ৯টায় সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়ে দেন, মহাসমাবেশের অনুমতি পাননি। তারা সমাবেশ এক দিন পিছিয়ে ২৮ তারিখ শুক্রবার দুপুর ২টায় পূর্বনির্ধারিত স্থান নয়াপল্টনে করবেন।

একই সঙ্গে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মসূচিতেও অনুমতি দেয়নি পুলিশ। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের বিকল্পে দুই জায়গার কথা বলেছে। জায়গা দুটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠ অথবা মহানগর নাট্যমঞ্চ। এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু গণমাধ্যমে বলেন, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করতে আমাদের মৌখিক অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতিও নিয়েছি। এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রাস্তায় সমাবেশ না করার জন্য। আমরা সেটি মেনে নিয়েছি। আমরা পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চেয়েছিলাম কিন্তু সে বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। তাই সর্বশেষ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠে সমাবেশ করতে পারি। সেখানে অস্থায়ী মঞ্চ করা হবে। জিমনেশিয়াম মাঠের অনুমতির জন্য ঢাবি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তবে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ায় আগারগাঁও পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে পূর্বঘোষিত সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন। তবে বিএনপি কর্মসূচি এক দিন পিছিয়ে দেয়ায় তারাও কর্মসূচি পিছিয়ে দেয়।

জানা গেছে ‘চল চল ঢাকা চল’ স্লোগানে সারা দেশের নেতাকর্মীদের রাজধানীতে জড়ো করার চেষ্টা করছে বিএনপি। কর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে লন্ডন থেকে অনলাইন মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসতে আহ্বান করেছেন। প্রশাসনের জন্য দিয়েছেন বিশেষ বার্তা। সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলের নীতিনির্ধারকরা নানামুখী চেষ্টা ও সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। দলের স্থায়ি কমিটিসহ শীর্ষদের নেতৃত্বে একাধিক সমন্ধয় বৈঠক ও হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ইতোমধ্যেই সারা দেশে দলের সব পর্যায়ের কমিটির সদস্যদের মহাসমাবেশে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীদের আগেভাগেই ঢাকায় পৌঁছানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। টার্গেট দেয়া হয়েছে যেন বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছা হয়। দলটির অধিক সংখ্যক নেতাকর্মী যে নির্দেশিত হয়ে ঢাকায় পৌঁছে গেছে তার দৃশ্য দেখা গেছে সরেজমিন। গতকাল সকাল থেকে বিএনপির অফিসের আশেপাশে প্রায় কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে দলে দলে দেখা গেছে। তবে সন্ধ্যার পর দৃশ্যপট কিছুটা উল্টে যায়। বিএনপির সিনিয়র নেতারা জড়ো হওয়া নেতাদের সরিয়ে দেন।

এ ছাড়া গতকাল সকালে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। গত এক বছর ধরে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, বিভাগীয় গণসমাবেশ, পদযাত্রা, তারুণ্যের সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির পর ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি দেয় দলটি। এই দিন গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরামসহ আরও কিছু দল মহাসমাবেশ করবে। ইসলামী আন্দোলন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করবে। তবে রাত ৯টা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়, তাদেরও অনুমতি দেয়া হয়নি। এবি পার্টিও ২৭ জুলাই প্রতিবাদী অবস্থান ও বিক্ষোভ করবে বিজয়-৭১ চত্বরে। বিএনপি কর্মসূচি পিছিয়ে দেয়ায় তারাও একদিন কর্মসূচি পেছায়।

আগামীকাল মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়েই সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবে বিএনপি। মহাসমাবেশ থেকে এক দফা দাবি আদায়ে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া হচ্ছে । সেটি ৭২ ঘণ্টার জন্য হতে পারে। সরকারের গতিবিধির সঙ্গে আন্দোলনের ছকও পরিবর্তন হবে। সচিবালয় কিংবা নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের চিন্তাও রয়েছে। তবে আজকের মহাসমাবেশ শেষে কিছুদিন স্বাভাবিক কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তারপর ঢাকায় অবস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আগে-পরে কিছু কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থেকে আবার আন্দোলন জোরদার করা হবে। সেপ্টেম্বর রাজধানীতে একটি মহাসমাবেশ ও পরবর্তীতে আরও একটি মহাসমাবেশ শেষে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে বিএনপি। এরপরও দাবি আদায় না হলে নির্বাচন বর্জনের পথে যাবে। এদিকে একই দিন দুপুর ২টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমন্বয়ে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ করার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে তারাও অনুমতি পাওয়ার অনিশ্চয়তায় রয়েছে। বিএনপির মহাসমাবেশের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নেতাকর্মী জড়ো করতে প্রস্তুতি রয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার সমন্বয়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির শরিকরা যেখানে সমাবেশ করবে : ঢাকার বিভিন্ন স্পটে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরাও সমাবেশ করবে। প্রাথমিকভাবে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাব অথবা মৎস্য ভবনের সামনে, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি যৌথভাবে মতিঝিলে, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি পান্থপথে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ পল্টনে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংক, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পল্টনের আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য জাতীয় প্রেস ক্লাবে, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে মহাসমাবেশ করবে বলে জানা গেছে।

ঢাকায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আটক : বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে দলটির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিএমপির ওয়ারী, শাহজাহানপুর, পল্টন, পল্লবী ও দারুসসালাম থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । এদের মধ্যে ২৩ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদেরকে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হলে দায় বিএনপির —ওবায়দুল কাদের : বিএনপি তথাকথিত আন্দোলনের নামে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুুল করার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, কোনোভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট হলে এবং জননিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটলে তার দায়ভার বিএনপিকে নিতে হবে। গতকাল আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিহিত করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বিএনপির রাজনীতির মূল হাতিয়ার হলো সন্ত্রাস ও মিথ্যাচার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ভূলুণ্ঠিত করে অসাংবিধানিক ও অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের টুঁটি চেপে ধরে। বিএনপি সর্বদাই গণচেতনার বিপরীতে পথচলা রাজনৈতিক অপশক্তি। বিএনপি ও তার দোসররা বারবার এ দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। জনমনে ভীতির সঞ্চার করে জনগণকে জিম্মি করে যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য।

এক বছরে ২০ নেতা নিহত, আন্দোলন চলবে —মির্জা ফখরুল : সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মহাসমাবেশের দিন-ক্ষণে পরিবর্তন এনেছে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো। আগামীকাল শুক্রবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বহুল আলোচিত এই মহাসমাবেশ হবে। গতকাল রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে শুক্রবার বেলা ২টায় সমাবেশ হবে। ২৭ জুলাই পালনের ঘোষণা দিয়েছিলাম আমরা কিন্তু প্রশাসন আমাদের অনুমতি দেয়নি। আমরা চেষ্টা করেছি, আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি, তবুও তারা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি। বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, এক বছরে ২০ নেতা নিহত হয়েছে। এখনো আমাদের অনেক নেতাকে আটক করা হয়েছে, তল্লাশি চালানো হচ্ছে কিন্তু বিএনপির আর পিছু হটার সময় নেই, আন্দোলন চলবে।

Share this post

PinIt
scroll to top