দেশের তথ্য ডেস্ক ইতালি প্রতিনিধি :- জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং এই অশুভ শক্তির পদচারণা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে যে, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। মুক্তিযুদ্ধে যাদের সমর্থন পাইনি, তারা এখন নানাভাবে আমাদের দেশকে নিয়ে খেলতে চায়। তো এই খেলোয়াড়দের খেলতে দেয়া যাবে না।’
বিএনপি নির্বাচনে না এসে বিদেশি প্রভুদের দিয়ে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ নিয়ে বিদেশিদের খেলতে দেয়া যাবে না।
ইতালির সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রোমের পারকো ডেই প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেলে নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে যাদের সমর্থন পাইনি, তারা এখন নানাভাবে আমাদের দেশকে নিয়ে খেলতে চায়। এই খেলোয়াড়দের (বিদেশি) খেলতে দেয়া যাবে না।’
বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি জানে নির্বাচন হলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না…কাজেই তারা নির্বাচন চায় না। তারা কিছু বিদেশি প্রভুর পদলেহন করে; পদলেহন করে তাদের দিয়ে দেশের মানুষকে কষ্ট দিতে চায়।
‘দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে গতিধারা, সেটাকে ব্যাহত করতে চায়। কারণ ক্ষমতায় থেকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা বানিয়ে যে লোভ এসে গেছে, ওইটাই তাদের কাছে সবচেয়ে বড়।’
তিনি বলেন, ‘ওরা তো ক্ষমতায় ছিল। অবৈধভাবে জিয়াউর রহমান এসেছে। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এরশাদ এসেছে। এরপর খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে এসেছে। তারা এ দেশের কোনো দিন কল্যাণ চাইবে না, চায়নি।
‘এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে, তারা ভোটে মানুষের কাছে দাঁড়াতে পারেনি। তারা চায় এ দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হবে এবং সেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা; এটাই তাদের উদ্দেশ্য।’
জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং এই অশুভ শক্তির পদচারণা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে যে, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। মুক্তিযুদ্ধে যাদের সমর্থন পাইনি, তারা এখন নানাভাবে আমাদের দেশকে নিয়ে খেলতে চায়। তো এই খেলোয়াড়দের খেলতে দেয়া যাবে না।’
বিএনপি কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইবে প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, ক্ষমতায় এসে আর্মি রুলস লঙ্ঘন করে সেনাপ্রধান নিজেকে আবার নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। ঘোষণা দিয়ে তার রাজনীতি শুরু। ওই অবস্থায় হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি ভোট, সব ভোটই তো ভুয়া।
‘এভাবে চুরি করে করেই তো…সেই জেনারেলের পকেট থেকে যে দলের সৃষ্টি, তারা জনগণের কাছে যাওয়ার তাদের মুখটা কোথায়? আর অগ্নিসন্ত্রাস করে যাদেরকে হত্যা করেছে, তাদের সামনে তারা কোন মুখে ভোট চাইবে?’
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়, এরপরও কেউ কেউ স্যাংশন দেয়। যাদের দ্বারা আমরা সন্ত্রাস দূর করলাম, যাদের দ্বারা আমরা জঙ্গিবাদ দমন করলাম, তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন। এর রহস্য তো বুঝলাম না। ব্যাপারটা কী? তাহলে এই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসটা কারা সৃষ্টি করে, সেটাই তো আমাদের প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, ‘আবার কথায় কথায় হুমকি, ভিসা স্যাংশন দেবে। আমি সেটা বলেছিলাম, মহাদেশ তো আর একটাই না পৃথিবীতে। আর আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে না গেলে আমাদের কিছু হবে না। আরও মহাদেশ আছে, মহাসাগর আছে।’
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতে যত চোরা টাকা রেখেছে বাইরে, সেগুলো দিয়েই এখন আন্দোলন…আন্দোলন করে নাকি সরকার উৎখাত করবে। তো আমরাও ছেড়ে দিয়েছি যে, ঠিক আছে, করো আন্দোলন, দেখি কত জোর।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, তার দল ও সরকার আন্দোলন করতে কাউকে বাধা দিচ্ছে না, কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) বিরোধী দলে থাকতে তো মাঠেই নামতে দিত না। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অফিসে কোনো দিন যেতে পারতাম না; আমাদের নেতা-কর্মীরা যেতে পারত না। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে বিএনপি হত্যা করেছে। কারও চোখ তুলে নিয়েছে, কারও হাত কেটে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছে।
‘কী না অত্যাচার তারা করেছে! আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কত না সহ্য করেছে!’
আগামীতে আবার নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের বদ্বীপটাকে উন্নত, বদ্বীপের অধিবাসী, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে তারা যেন সুন্দরভাবে থাকতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়ে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছি। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি এবং বাস্তবায়নের কাজও শুরু করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন যে কাজগুলো আমরা নিয়েছি, সেটা আমাদের সম্পন্ন করতে হলে, আওয়ামী লীগকে আবারও সরকারে আসতে হবে যদি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হয়। তার জন্য দরকার দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আর ভোট।’
তিনি বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে।
‘নৌকায় ভোট দিয়ে যে স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে, এটার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে, বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়তে হলে আবার নৌকা মার্কায় ভোট চাই।’