দেশের তথ্য ডেস্ক ঢাকা প্রতিনিধি :- দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র পাঁচ মাস। ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নভেম্বরেই তফসিল ঘোষণা হবে এমন রোডম্যাপ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে তার আগেও তফসিল দেয়া হতে পারে এমন ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন থেকে। রাজনীতিতে সংঘাতের ইঙ্গিত আঁচ করায় নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের আগে হতে পারে এমন গুঞ্জন রয়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে এক দফা ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে বলে পাল্টা আওয়ামী লীগও এক দফা ঘোষণা দেয়। গত এক সপ্তাহে সারা দেশে বিএনপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের অবস্থানকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির দুই নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই সহস্রাধিক। ২৩ মামলায় প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার আসামি হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ফের ঢাকায় আগামী ২৭ জুলাই মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। ওইদিনই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ সমাবেশের ডাক দেয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলছেন, ২৭ তারিখে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সংঘাত তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। আবার যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলও বলেছেন, ওই দিন ঢাকায় দলের তিন সংগঠন রাজপথে থাকবে, কোনো অপচেষ্টা হলে রুখে দেয়া হবে।
এদিকে অন্যান্য সরকারবিরোধীরাও সোচ্চার হয়ে উঠছে। তিন দাবি নিয়ে মাঠে নামছে জামায়াতে ইসলামী। ইতোমধ্যে তারা ঢাকাসহ জেলা সদরে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ২৮ জুলাই বিভাগীয় শহরে মিছিল, ৩০ জুলাই জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও ১ আগস্ট ঢাকা মহানগরীতে সমাবেশ করবে তারা। এ ছাড়া হেফাজতে ইসলামীও এক দফা ঘোষণা করেছে। শীর্ষ নেতাদের মুক্তির জন্য সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমও ঘোষণা দিয়েছেন তারা এই সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাবেন না, শিগগিরই তারা কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। নিবন্ধন না পেয়ে আমার বাংলাদেশ পার্টিও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। গতকাল তারা আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেছে। বাম সংগঠনের একাংশ বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আগামী ২৭ তারিখ ঢাকায় অবস্থান করবে বলে জানিয়েছে।
রাজনীতিতে চোখ রাখা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বর্তমানে রাজনীতির যে পরিস্থিতি তা ভয়ঙ্কর রক্তপাতের দিকে এগোচ্ছে। দেশে একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তারা বলছেন, বর্তমানে দেশে যে ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আছে, তা অব্যাহত রেখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করা যায় না। কয়েক দিন আগে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে (ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন) দেখা গেছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন দিয়ে, প্রশাসন দিয়ে, পুলিশের এই আচরণ দিয়ে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের এমন মনোভাব নিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বর্তমানে বড় রাজনৈতিক দলের কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। আলোচনায় বসতেও উদ্যোগী নয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির নেতারা যেভাবে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন, তা শত্রুতামূলক মনে হয়। যার ফলাফলও মাঠে দেখা যাচ্ছে। মারামারি হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক আন্দোলনে এখনই দেশে রক্তপাত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে রক্তপাত আরও বেড়ে যাবে। এটি স্পষ্ট যে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামনে কেমন হবে, তা নিয়ে জনমনে নানা শঙ্কা রয়েছে। অল্প সময়ে এই পরিস্থিতি ভালো হবে, সে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘সংঘাত তো সরকারই তৈরি করছে। তারাই তো পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। সংঘাতের যে ধারাবাহিকতা তা রাজনীতির পুরনো খেলা। সংঘাত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সৃষ্টি করা হয়। বিরোধীদের মামলা-হামলা করে ঘায়েল করার জন্য। এবার আগাম যেভাবে সংঘাত তৈরি হয়েছে তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ঢাকা-১৭ আসনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি একটি আসনের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সারা দেশের ৩০০ আসনের কীভাবে নিরাপত্তা দেবেন। পুলিশ প্রশাসনের সামনে একজন প্রার্থীকে হামলা করা হয়, তারা কিছুই করতে পারে না, তাদের ওপর কিভাবে রাজনৈতিক দলগুলো ভরসা করবে।’
২৭ জুলাই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ সমাবেশ : সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ২৭ জুলাই দুপুরে যৌথভাবে শান্তি সমাবেশ করবে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। আগামী ২৭ জুলাই শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন। বিএনপি-জামায়াতের ‘নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ এই সমাবেশ করবে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। গতকাল সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক নিখিল বলেন, যে গোষ্ঠী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের অগ্রগতির বিরুদ্ধে, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, সেই গোষ্ঠী হলো বিএনপি-জামায়াত। তারা একটি দেশবিরোধী শক্তি। সেই বিএনপি-জামায়াতের হত্যা-ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে আগামী ২৭ জুলাই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে। তারা যদি কোনো অপচেষ্টা চালায় তা রুখে দেয়া হবে।
ঢাকার মহাসমাবেশে সহিংসতার আশঙ্কা বিএনপির : সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ডাকা ২৭ জুলাইয়ের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা করছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যুবলীগের কর্মসূচি ছিল ২৪ জুলাই। আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করার পর যুবলীগ তাদের কর্মসূচি ২৭ জুলাইয়ে নিয়ে গেছে। সংঘাতপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করতে তারা এটা করেছে, তা পরিষ্কার। কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’ গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে এক যৌথসভা শেষে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, কয়েক দিন ধরে সরকারের মন্ত্রীরা হুমকি দিচ্ছেন। তারা এমন কথাও বলছেন, ছেঁকে ছেঁকে তোলা হবে। তাদের যে ভাষা, তা সন্ত্রাসী ভাষা। সরকারের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি উসকানিমূলক কথা বলছেন, একই সঙ্গে তারা উসকানিমূলক কাজও করছেন বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটি কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা এখন পর্যন্ত যতগুলো আন্দোলন করেছি, প্রতিটি আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। আপনারা দেখেছেন, আমাদের দুজন লোক নিহত হয়েছেন, ৯ হাজার মিথ্যা মামলা করেছে, তারপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশা করব, ভয়াবহ সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি পরিহার করবে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ এবং সরকার এটি নিশ্চিত করবে।’ মহাসমাবেশ থেকে কী বার্তা দিতে চান, এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বার্তা একটাই— পদত্যাগ। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে