দেশের তথ্য ডেস্ক ঢাকা প্রতিনিধি :- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ছয়টি এলাকাকে ডেঙ্গুর জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই ১১টি এলাকা থেকেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। দেশে গতকাল রবিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৯ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ২৯২ জন, যা চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ।
এ নিয়ে এ বছরে মারা গেছে ১৭৬ জন।
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্য শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট খোন্দকার মেহেদী আকরাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্যানুযায়ী, প্রতি ১০০ জনে ১০ জন রোগী সিভিয়ার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। এই হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। তাই বাংলাদেশে মৃত্যু বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সিভিয়ার ডেঙ্গুর অন্যতম কারণ হলো ১৮ মাসের মধ্যে অনেক মানুষ ডেঙ্গুর অন্য কোনো ধরন দ্বারা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন, যদি গত বছর টাইপ-৩ দ্বারা আক্রান্ত হয়, এবার সে টাইপ-২ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।
ঢাকার ১১ এলাকায় রোগী বেশি
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ছয়টি এলাকাকে ডেঙ্গুর জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর; এই ১১টি এলাকা থেকেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার গতকাল এক ব্রিফিংয়ে জানান, শনিবার ঢাকার হাসপাতালগুলোতে যেসব রোগী ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে ওই ১১টি এলাকা থেকে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির যাত্রাবাড়ী, মুগদা, কদমতলী, জুরাইন, ধানমণ্ডি ও বাসাবো এবং ঢাকা উত্তর সিটির উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, তেজগাঁও ও বাড্ডা এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে যাচ্ছে।
এ বছর বর্ষা, প্রাক-বর্ষা মৌসুম জরিপে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৫৫টি ওয়ার্ডকে এডিস মশার ঘনত্বের হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছিল। এর মধ্যে উত্তরের ২৭টি এবং দক্ষিণের ২৮টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া যায় ২০-এর বেশি। মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে।
৯ জনের মৃত্যু, আটজনই ঢাকার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ১৭৬-এ পৌঁছল।
যাদের মধ্যে ১২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে চলতি জুলাই মাসের ২২ দিনে। হাসপাতালে নতুন রোগীদের বেশির ভাগই ঢাকার বাইরে। ঢাকায় এক হাজার ৬৪ জন এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ২২৮ জন ভর্তি হয়েছে। এ বছর হাসপাতালে ৩২ হাজার ৯৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে জুলাই মাসের ২২ দিনেই ভর্তি হয়েছে ২৪ হাজার ৯৯৯ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে সাত হাজার ১৭৫ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় চার হাজার ১৪৯ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে তিন হাজার ২৬ জন। এ বছর ঢাকার মুগদা হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি, চার হাজার ৭৩২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক হাজার ৯০১ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে এক হাজার ৬৯১ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫৪৯ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩৪১ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৬৬৮ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৬৬৭ জন এবং ডিএনসিসি হাসপাতালে ৬৭৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে।