আওয়ামী লীগ বড় প্রস্তুতি নিয়ে রাজপথে থাকবে

awami.webp

দেশের তথ্য ডেস্ক :- আগামী ২৭ জুলাই বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে রাজপথে বিশৃঙ্খলা, সহিংসতার অপচেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তারা মনে করছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন ভণ্ডুলের লক্ষ্য নিয়ে বিএনপির মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। ফলে এদিন ক্ষমতাসীনরা রাজধানীতে লক্ষাধিক নেতাকর্মী নিয়ে রাজপথে থাকবে। এ নিয়ে গতকাল রবিবার থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে এমন তথ্য জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগদলীয় সূত্রগুলো জানায়, বিএনপিকে রাজপথ দখলের কোনো সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা আসার পথে যেন কোনো রাস্তায় বসে পড়তে না পারেন সে বিষয়ে সজাগ থাকবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এই কাজে অগ্রণী ভূমিকায় থাকবে সহযোগী সংগঠন যুবলীগ।

রাজপথে শক্তি প্রদর্শনে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন মনে করা হয় যুবলীগকে। এদিন ঢাকার আশপাশের সব জেলা ও মহানগরে যুবলীগের নেতাকর্মীদেরই মাঠে নামানো হবে। থাকবেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে কেউ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।

কিন্তু কেউ যদি অশুভ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তখন আওয়ামী লীগ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না।’
আগামী ২৭ জুলাই দুপুরে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে এই শান্তি সমাবেশের আয়োজন করছে। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও যোগ দেবেন। সমাবেশ সফল করতে গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের এই তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন।

সেখানে যুবলীগের ঘোষিত তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ কর্মসূচির বদলে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। যুবলীগের ঘোষিত তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ আজ হওয়ার কথা ছিল। তার বদলে ২৭ জুলাই বিএনপির সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ হবে। সমাবেশে তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে লক্ষাধিক লোকের জমায়েত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। আজ সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।

সভার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা তিন সংগঠনই ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের সমাবেশে যোগ দিতে বলব। লক্ষাধিক লোকের জমায়েত হবে। সমাবেশের দিনে ছাত্রলীগ সচিবালয় থেকে জিরো পয়েন্ট হয়ে সমাবেশস্থলের দিকে অবস্থান নেবে। যুবলীগ গোলাপশাহ মাজার থেকে সমাবেশের দিকে অবস্থান নেবে। আর স্বেচ্ছাসেবক লীগ দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সমাবেশস্থলের দিকে অবস্থান নেবে।’ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ঢাকা ও আশপাশের ১১ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেবেন। প্রতিটি জেলা থেকেই অন্তত শতাধিক বাসে যুবলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন। এরই মধ্যে যুবলীগের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর ও জেলা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার নেতাকর্মীদের ২৭ জুলাই দুপুরের আগেই ঢাকায় উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইম তালুকদার বিপ্লব কালের কণ্ঠকে জানান, ঢাকার সমাবেশে যোগ দিতে সেখানে ১১০টি বাস বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জেলার ১৬টি ইউনিটের পাঁচ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেবেন।

নারায়ণগঞ্জেও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ২৭ জুলাই ঢাকার সমাবেশে যোগ দিতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাঁরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত ১৪ বছরে দল আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। এখন দলকে প্রতিদান দেওয়ার সময় এসেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।’

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপি সারা দেশ থেকে নেতাকর্মী নিয়ে এসে রাজপথে লাগাতার অবস্থান নিতে পারে। সেই সতর্কতার অংশ হিসেবেই বড় জমায়েতের লক্ষ্য নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশৃঙ্খলাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছে। তারা নির্বাচন ভণ্ডুল করার জন্য সন্ত্রাসের পথে হাঁটছে। সে কারণে নির্বাচনের পাঁচ মাস বাকি থাকতেই তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ দিয়েছে। এত আগেই এ কর্মসূচির পর তারা আর কী কর্মসূচি দেবে?

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা থাকলেও তা নিয়ে আওয়ামী লীগ ভীত নয় বলে জানিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। তাঁরা মনে করেন, আন্দোলন করে, রাজপথে নাশকতা করে দাবি আদায় সম্ভব নয়।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আমাদের জন্য শঙ্কার কিছু নেই। যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো মাঠে থাকবে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, বিএনপির যেকোনো ধরনের নাশকতা, অরাজকতা প্রতিহত করার মতো সক্ষমতা সরকার ও আওয়ামী লীগের রয়েছে।

প্রতিটি ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থান নেবে মহানগর আ. লীগ

বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হবে, যেন তাঁরা যেকোনো পরিস্থিতিতে মাঠে নামতে পারেন। ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ ককেজন নেতা কালের কণ্ঠকে এমন তথ্য জানিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এখনো কোনো কর্মসূচি গ্রহণের নির্দেশনা আসেনি। আমরা বার্তার অপেক্ষায় আছি। আর মহানগরের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার জন্য বলেছি, দলের নির্দেশ এলেই আমরা যেন মাঠে নামতে পারি।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেব, কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে তা যেন প্রতিহত করতে পারি।’

কর্মসূচির কথা ভাবছে আ. লীগও

২৭ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচির বিপরীতে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। আপাতত ২৭ তারিখে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত হলেও মূল দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়ার আলোচনা চলছে।

এ বিষয়ে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমাদের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও আমরা কোনো না কোনো কর্মসূচি দেব। এগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমাদের কর্মসূচি থাকবে।’

Share this post

PinIt
scroll to top