টেকনাফের গহীন পাহাড়ে ‘আরসার টর্চার সেল’

aersa.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক টেকনাফ প্রতিনিধি :-  অপহরণ করে মানুষদের পাহাড়ের গোপন টর্চার সেলে নিয়ে যেতেন আরসার সদস্যরা। সেখানে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে নির্যাতন করা হতো। পরিবার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা টের পেলে অপহৃতকে হত্যা করে মরদেহ গুম করা হতো।

কক্সবাজারের টেকনাফের গহিন পাহাড়ে মিয়ানমারের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসার গোপন আস্তানা খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)।

বাহারছড়া পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে আরসার শীর্ষ কমান্ডার নুর মোহাম্মদসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানানো হয়।

র‍্যাব জানায়, ওই আস্তানায় তারা একটি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছেন। অপহরণ করে সেখানে মানুষকে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ আদায়ে নির্যাতন চালানো হতো।

ওই আস্তানা থেকে আরসার সামরিক কমান্ডারসহ ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সাতটি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও টাকা।

গ্রেপ্তার হওয়াদের নামে হত্যা, অপহরণ এবং আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার গহিন পাহাড়ে এ অভিযান চালানো হয়। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১৫ এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘টেকনাফের গহিন পাহাড়টিতে আরসা সন্ত্রাসীরা গোপন আস্তানা তৈরি করে ‘‘টর্চার সেল’’ গড়ে তুলেছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওখানে অভিযান চালানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘গোপন আস্তানার তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথমে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের অন্যতম সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় অস্ত্র ও গুলি।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা খুন ও অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বিষয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ দিয়েছেন বলেও জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।

তিনি জানান, হাফেজ নুর মোহাম্মদের নেতৃত্বে আরসার ৩০ থেকে ৩৫ জন সদস্য কুতুপালং ক্যাম্প ও তার পাশের এলাকায় খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত।

তারা দুর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র চোরাচালান করতেন বলে জানতে পারার কথা তুলে ধরে মঈন বলেন, ‘হাফেজ নুর মোহাম্মদ তার দলের সদস্যদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে খুন, অপহরণ ও গুমের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করতেন। চাঁদার অর্থ না পেলে তাদের অপহরণ করে নিয়ে যেতেন। পরে শারীরিক, পাশবিক নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করতেন। মুক্তিপণ না পেলে হত্যা করে গহিন পাহাড়ের জঙ্গলে মরদেহ গুম করতেন।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাফেজ নুর মোহাম্মদ ২০১৬ সালে আরিফ উদ্দিন নামে একজেনের মাধ্যমে আরসায় যোগ দেন। তিনি কুংফু ও বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী। তার নেতৃত্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ছয় খুন ছাড়াও বিভিন্ন সময় হত্যা হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, তারা যে আস্তানাটি খুঁজে পেয়েছেন সেখানকার ‘চর্টার সেলের’ তত্ত্বাবধান করতেন ফারুক হারেস। তারও সাত থেকে আটজনের একটি দল রয়েছে। তারা ক্যাম্পের প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে নেতাদের কাছে তথ্য পাঠাতেন।

মনির আহাম্মদ, নূর ইসলাম ও ইয়াছিন পাহাড়ে অবস্থিত গোপন আরসা ঘাঁটির নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতেন বলেও জানান র‌্যাব কমান্ডার।

গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনকে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করার কথা জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তাদের তথ্য মতে ক্যাম্পে আরসার সাড়ে চার শ সদস্য সক্রিয়। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব।’

Share this post

PinIt
scroll to top