দেশের তথ্য ডেস্ক রাজশাহী প্রতিনিধি :- ‘নারীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করে প্রান্তিক নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। এতে দূর হবে বেকারত্ব, সচ্ছলতা আসবে ঘরে ঘরে। গ্রামীণ এই বেকার নারীদের মাঝে আশার আলো ছড়াচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের স্বাবলম্বী করতে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে সেলাই মেশিন। অসচ্ছল নারীদের জন্য ভালোভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ।’ বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এগুলো বলেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন। সম্প্রতি এই উপজেলার অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় চালু হয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
রাজশাহীর দুর্গাপুরে দরিদ্র নারীদের স্বপ্ন পূরণ করতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণকেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন বয়সের নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের প্রত্যেককে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন দেওয়া হবে। বসুন্ধরা গ্রুপের এমন মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দুর্গাপুর উপজেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অনেকেই বলেন, আমাদের উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে এগিয়ে এসেছে দেশের শীর্ষ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। এটা আমাদের জন্য সুখবর। বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের ও মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। তাদের সাধুবাদ জানাই।
দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের আমগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন আঞ্জুরা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘কৃষক পরিবারে আমার জন্ম। মা-বাবা ও দুই ভাইয়ের সংসারে বেড়ে উঠেছি। অভাবের সংসারে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করি। এরপর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই মা-বাবা বিয়ে দিয়ে দেন। পড়ালেখার ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে চালিয়ে যেতে পারিনি। বিয়ের দুই বছরের মাথায় পরিবারে একটি পুত্রসন্তান আসে। বেশ ভালোই চলছিল আমাদের সংসার। চার বছরের মাথায় স্বামী আলতাব হোসেন যৌতুকসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অন্যত্রে গিয়ে সংসার বাঁধেন। আমার পরিবারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। দুই বছরে সেই শিশুসন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে এসেছিলাম। নানা ধরনের ছোট কাজ করেছি। সন্তানের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে কষ্টে উপার্জিত টাকা দিয়ে একটি পুরনো সেলাই মেশিন কিনেছিলাম। সেই সেলাই মেশিনে কাজ করে বেশ ভালোই চলছিল ছোট্ট সংসার। গত এক বছর আগে সেই পুরনো সেলাই মেশিনটিও নষ্ট হয়ে যায়।’
আঞ্জুরা আরো বলেন, ‘একটি সেলাই মেশিনের জন্য কত ঘুরেছি চেয়ারম্যান-মেম্বারের দ্বারে দ্বারে। কেউ ফিরেও তাকাননি। শুনেছি বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সেলাই প্রশিক্ষণের কথা। এখানে নাকি প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিনও দেওয়া হবে। এ জন্য আমি ভর্তি হয়ে নিয়মিত কাজ শিখছি। নতুন নতুন অনেক কাজ শিখতে পারছি। আগেই সেলাইয়ের কাজ কিছুটা জানি বলে অনেক সহজে পারছি। আমাকে আলোর পথ দেখিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এখন সন্তানকে নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিন্তে চলতে পারব। বেঁচে থাকার পথ মসৃণ করে দেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ।’ আরেক প্রশিক্ষণার্থী আইরীন খাতুন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে অনেক সুন্দরভাবে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমার মতো যাঁরা পড়াশোনা করছেন কিন্তু সচ্ছল না, তাঁরা অনেকেই এই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কাজ শিখে সেলাই মেশিন পেলে সবাই আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব। বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’
হাসিনা পারভীনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তাঁর স্বামী আসাদুজ্জামান কিছুদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামী ও দুটি সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। কী করবেন, কিভাবে চলবে সংসার—এসব ভেবে যখন দিশাহারা হাসিনা পারভীন, তখনই এগিয়ে আসে বসুন্ধরা শুভসংঘ। এখন তিনি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এসে শিখছেন সেলাই কাজ, দেখছেন পরিবারের হাল ধরার স্বপ্ন। এমন অনেক কষ্টের গল্প নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন নারীরা। নিয়মিত সেলাইয়ের ফোঁড়ে স্বপ্ন বুনছেন তাঁরা।
সেলাই প্রশিক্ষক বদিউজ্জামান বদি বলেন, ‘প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। হাতে-কলমে এই প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া নারীদের ছেলে-মেয়ে ও শিশুদের পোশাক তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, বসুন্ধরা শুভসংঘ আয়োজিত এই প্রশিক্ষণ শেষে সব প্রশিক্ষণার্থী নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।’ ঝালুক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার আলী বলেন, যাঁদের এই সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের বেশির ভাগেরই অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী। ছেলেমেয়ের বায়না পূরণ করার মতো ক্ষমতা তাঁদের নেই। এই অভাবী নারীরা এখন আর কেউই বসে থাকবেন না। তাঁরা সংসারের সব কাজ করার পর অবসরে সেলাইয়ের কাজ করতে পারবেন। অবসর সময় কাজে লাগিয়ে মাসে অন্তত চার-পাঁচ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। বসুন্ধরা গ্রুপ তাঁদের সেই আয়ের পথটি তৈরি করে দিল।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ‘আমি জেনেছি দুর্গাপুরে বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে কর্মহীন অসচ্ছল নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের সেলাই মেশিন প্রদান করা হবে। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ এমন মহতী উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের আমগাছি গ্রামে চলমান এই সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে ২০ নারীকে সেলাই মেশিন দেওয়া হবে। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে তাঁদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেবেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।’