ভোলা-৪ (চরফ্যাশন ও মনপুরা) প্রার্থী বাছাইয়ে জটিল হিসাব

VOLA-NEWS-20230719180435.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক ভোলা প্রতিনিধি :-   দ্বীপ জেলা ভোলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত ভোলা-৪ সংসদীয় আসনটি চরফ্যাশন ও মনপুরা দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। তবে অন্য দলের প্রার্থীও রয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় দুই দলেই রয়েছে একাধিক প্রার্থী। জাতীয় পার্টি আরও একধাপ এগিয়ে। এরশাদ অনুসারীদের প্রার্থী সংখ্যা চার। একক প্রার্থী আছে ইসলামী আন্দোলনে। জোটবদ্ধ নির্বাচনের কারণে ২০০১ সাল থেকে এ আসনে প্রার্থী দিচ্ছে না জামায়াত। তবে এবার দলটি একক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সারা দেশে প্রার্থী ঘোষণা দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত একক নির্বাচনে গেলে জামায়াতেরও প্রার্থী থাকবে ভোলা-৪ আসনে। এই জনপদে ভোটের সমীকরণে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের বিশেষ প্রভাব থাকলেও নির্বাচনে জিততে প্রার্থী বাছাইয়ে কৌশলী হতে হবে দলগুলোকে। কারণ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চরফ্যাশন মনপুরায় ভোটের সমীকরণ ক্রমেই জটিল হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে বেশিরভাগ সময় এই আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে ১৯৯৬ সালে ধানের শীষের প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার পর এ আসনটিতে নির্বাচনি সমীকরণ পাল্টে যায়। টানা ১০ বছর বিএনপির দখলে থাকে আসনটি। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে ধরপাকড় শুরু হলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা গা-ঢাকা দেন। কর্মীদের মধ্যেও আতঙ্ক ও অস্থিরতা শুরু হয়। অভিভাবকহীন ছন্নছাড়া বিএনপির মাঠের দুর্বলতার সুযোগ ভালোভাবেই কাজে লাগায় আওয়ামী লীগের একসময়ের জনপ্রিয় নেতা ও তিনবারের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। তার হাত ধরেই চরফ্যাশনের আওয়ামী রাজনীতি ফের ঘুরে দাঁড়ায় এবং তিনি সংসদ সদস্য হন।

 

এরপর আর পিছে তাকাতে হয়নি, চরফ্যাশন-মনপুরায় দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে আওয়ামী রাজনীতি। ১৫ বছর একটানা ক্ষমতায় থেকে শক্ত ভিত গড়ে তুলেছেন নৌকা প্রতীকের অনুসারিরা। বিপরীতে কোণঠাসা হয়ে কোনোমতে টিকে আছে বিএনপি। মূলদল ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রতায় নেতৃত্বের জট তৈরি ও ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যয়নসহ নানা জটিলতায় বিএনপির রাজনীতি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্রদলের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে যুব ও তরুণ প্রজন্মের বড় অংশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগে নাম লিখিয়েছে। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ধানের শীষের মাঠপর্যায়ের সমর্থকরাও কম্প্রমাইজ নীতিতে চলছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে যদি নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে এ আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কারণ বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে অভূতপূর্ণ উন্নয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন জয় করে নিয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য জ্যাকব। অন্যদিকে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে জিয়া পরিবারের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন সাবেক সাংসদ নাজিম উদ্দিন আলম। ১৯৯৬ সালে তার নাটকীয় উত্থানের মধ্য দিয়ে ধানের শীষ ব্রান্ড হয়ে উঠেছিল এ জনপদে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপির রাজনীতি ছন্নছাড়া অবস্থা থাকলেও ধানের শীষ ও খালেদা জিয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের বিশেষ আকর্ষণ ভোটের হিসাব পাল্টে দিতে পারে। তবে জামায়াত যদি প্রার্থী দেয় তাহলে জটিল সমীকরণ তৈরি হতে পারে। কারণ চরফ্যাশন-মনপুরায় বিগত সময়ে জামায়াতের অবস্থান খুব একটা ভালো না থাকলেও এবার চমক দেখাতে পারে দলটি। কারণ এ অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে জামায়াতের সাজাপ্রাপ্ত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর প্রতি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। এতে জামায়াতের ভোট ভাগ হলে জয় সহজ হবে আওয়ামী লীগের।

আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, টানা তৃতীয়বারের মতো এমপি হয়ে জ্যাকব তার পিতা সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুলের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে যাচ্ছেন। তিনি গত ১৪ বছরে চরফ্যাশনের আমূল পরিবর্তন করেছেন। তিনি চরফ্যাশন উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন থেকে ২১টি ইউনিয়নে রূপান্তর করেছেন। জ্যাকবের প্রচেষ্টায় চরফ্যাশন উপজেলায় একটি থানা থেকে শুরু করে চারটি থানা স্থাপন করা হয়।

চরফ্যাশনের কুকরি মুকরির ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলসহ পর্যটন স্থানগুলোকে জনপ্রিয় করে তুলতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। জ্যাকব টাওয়ার নির্মাণ করে সারা দেশে চরফ্যাশনকে বিশেষ পরিচিতি দিয়েছেন। এছাড়া চরফ্যাশনে রেজিস্ট্রি অফিস, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম চালু করে নাগরিক সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন জ্যাকব। চরফ্যাশন ও মনপুরায় তার প্রচেষ্টায় চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ও আরও পাঁচটি কলেজ নির্মাণ, অত্যাধুনিক বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ, মনপুরা ও চরফ্যাশনে সিসি ব্লকের বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করে নদীভাঙন রোধ এবং রাস্তাঘাট, ব্রিজ নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে জনগণের মন জয় করেছেন তিনি। তাই আগামী নির্বাচনে জ্যাকব অনায়াসেই জয়লাভ করবেন বলে মনে করেন তার অনুসারীরা। তবে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছে। জ্যাকব ছাড়াও একাধিক প্রার্থী নৌকা প্রতীকের জন্য দলীয় আনুগত্য লাভের চেষ্টা করছেন। তবে অতিসমপ্রতি অবসরপ্রাপ্ত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সমপাদক মেজবাহ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, তিনি ভোলা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। গত ঈদে এলাকার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে তার নির্বাচনের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমি এখন পিআরএলে আছি। সরকারি কর্মকর্তাদের অবসরের তিন বছরের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে আইনি বাধা রয়েছে। এটি নিয়ে একটি মামলা চলমান আছে। মামলা রায় হওয়ার আগে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার সুযোগ নেই। তবে দলীয় প্রধানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আইনি বাধা দূর হলেই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করব। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে।’ এছাড়াও চরফ্যাশনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আরব আলী মাস্টারের ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য অধ্যপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীনও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

অন্যদিকে বিএনপিরও একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছে। এ আসনটিতে সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম পাঁচবার নির্বাচন করেন। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে দুইবার ও ২০০১ সালে নির্বাচিত হন। তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নুরুল ইসলাম নয়ন প্রার্থী হওয়ার পর থেকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর উপজেলা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে নুরুল ইসলাম নয়নের অনুসারীরা পদ পদবি পাওয়ায় এ বিরোধ আরও বৃদ্ধি পায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এ আসন উদ্ধার করতে হলে নাজিমউদ্দিন আলম যোগ্য প্রার্থী বলে মনে করছেন তার অনুসারীরা। তবে নুরুল ইসলাম নয়নপন্থিরা মনে করছেন ফ্রেশ ইমেজের তরুণ বিএনপি নেতা ও কেন্দ্রীয় যুব দলের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, স্থানীয় সন্তান হিসেবে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার দাবিদার।

মনোনয়ন প্রশ্নে নাজিম উদ্দিন আলম আমার সংবাদকে বলেন, ‘দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত। আমার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমার বিরুদ্ধে কিছু লোককে মাঠে নামিয়েছেন। আমরা এখন বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ তৈরির লড়াইয়ে আছি। এখনও মনোনয়ন নিয়ে কথা বলার সময় আসেনি। স্বৈরাচারের পতন নিশ্চিত হলে দল আমার মতো জনপ্রিয় নেতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে চিন্তা করবে এটা ভাবার কোনো কারণ দেখি না।’ জ্যাকবের উন্নয়নের স্লোগান কিভাবে সামাল দিবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি যখন সংসদ সদস্য ছিলাম তখন দেশের জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ছোট। তারপরও আমি চরফ্যাশনের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমি যেসব রাস্তা নির্মাণ করেছি সেগুলো পাকা করে যদি কেউ ক্রেডিট নিতে চায় তাহলে কিছু বলার নেই। আমি চরফ্যাশনে আধুনিক শিক্ষার ভিত স্থাপন করেছি। স্বল্প বাজেটের মধ্যেও আট থেকে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছি। এছাড়া নাগরিক সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু করেছি। চরফ্যাশনের সাধারণ মানুষের কাছে আলম ও ধানের শীষের প্রতি যে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে, তার বিপরীতে দাঁড়াবার শক্তি কারো নেই।’ তিনি বলেন, জাতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে ২০০৮ সালে নৌকার প্রার্থী জয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে রাতের ভোটে জিতেছে আওয়ামী লীগ। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে চরফ্যাশন মনপুরায় বিএনপির জয় শতভাগ নিশ্চিত।

দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন। তাকে ঘিরে দলে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে এ বিষয়ে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ‘চরফ্যাশনের বিএনপিতে কোনো বিরোধ নেই। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। একটি বৃহৎ দলে এ ধরনের প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক। সারা দেশেই এমন প্রতিযোগিতা দেখা যায়। বড় সব দলেই নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে।’ এ যুবনেতা আরও বলেন, “ছাত্র রাজনীতি থেকেই দলের প্রতি আমার ‘কমিটমেন্ট’ প্রশ্নাতীত। মনোনয়নের দৌড়ে এদিক থেকে আমি এগিয়ে থাকব। কারণ ইতোপূর্বে যিনি দলের সমর্থন পেয়েছেন, দলের প্রতি আনুগত্যের বিষয়ে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া চরফ্যাশনের রাজনীতিতে স্থানীয় নেতৃত্বের যে চাহিদা রয়েছে সেদিক থেকেও দল আমাকেই বেছে নেবে।”

এ আসটিতে বিএনপি থেকে আরও একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী আছে বলে জানা গেছে। তিনি হলেন চরফ্যাশনের বাসিন্দা ও হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ছিদ্দিকুল্লাহ মিয়া। তবে ভোটের মাঠে তার কোনো প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়নি। এ বিষয়ে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ‘মনোনয়ন জমা দেয়ার মাধ্যমেই আমি ভোটের প্রচারণা শুরু করব।’ দলের সমর্থন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি বিএম কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি। আমি আশা করি দল আমাকে বিবেচনা করবে।

এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি কেফায়েতুল্লা নজিব, চরফ্যাশন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মনিরুজ্জামান শহীদ, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও জাতীয় পার্টির নেতা আব্দুল মান্নান। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী চরফ্যাশনের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভোলা জেলার (দক্ষিণ) সভাপতি আলাউদ্দিন হাজী। আর জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দলীয় ফোরামে মনোনীত হয়েছেন জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোস্তফা কামাল। দলের নির্দেশনা পেলেই তিনি আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র। মোস্তফা কামাল এর আগে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন।

জেলা নির্বাচনি অফিসের তথ্যমতে, ভোলা-৪ আসনের চরফ্যাশন উপজেলায় রয়েছে একটি পৌরসভা, ২১টি ইউনিয়ন, চারটি থানা। চরফ্যাশন উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৯০ হাজার ২১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ আট হাজার ৮৫২ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৮১ হাজার ৩৬৩ জন। অপরদিকে, ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় রয়েছে পাঁচটি ইউনিয়ন। এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৭০ হাজার ৭৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৬ হাজার ৪৮৮ জন এবং নারী ভোটার ৩৪ হাজার ২৮১ জন। সব মিলিয়ে ভোলা-৪ আসনে ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৬০ হাজার ৯৮৬ জন। ভোলা নির্বাচন অফিসে থাকা প্রাপ্ত নির্বাচনি ফলাফলের রেকর্ডে দেখা যায়, ভোলা-৪ আসনে ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমএম নজরুল ইসলাম নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সাদ জগলুল ফারুক নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ এমএম নজরুল ইসলাম পুনরায় নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনেই জয়লাভ করেন বিএনপির প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আলম। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হন তিনি। এরপর বিএনপির কাছ থেকে এই আসনটি হাত ছাড়া হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আলমকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালের সবশেষ নির্বাচিত বিএনপির প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আলমকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব।

Share this post

PinIt
scroll to top