দেশের তথ্য ডেস্ক বরিশাল প্রতিনিধি :- বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত সোমবার চিকিৎসাধীন একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নতুন রেকর্ড গড়ছে। সব শেষ রিপোর্ট অনুযায়ী মঙ্গলবার এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৫৫ জন রোগী। যা চলতি মৌসুমসহ সাম্প্রতিক বছরে চিকিৎসাধীন সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগীর রেকর্ড।
এর আগে গত সোমবার চিকিৎসাধীন ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩০ জন এবং রবিবার চিকিৎসাধীন ছিলেন ১১৫ জন রোগী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার সদর উপজেলার জোৎস্না আক্তার (২২) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম।
এদিকে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ অব্যাহত থাকলেও রোগীদের সুযোগ-সুবিধা কোনো কিছুই বৃদ্ধি করা হয়নি। নানা সংকট আর অভাব-অভিযোগের মধ্য দিয়ে অমানবিক পরিবেশে চিকিৎসা চলছে ডেঙ্গু রোগীদের।
রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওয়ার্ডগুলোতে ধারন ক্ষমতার কয়েকগুন রোগী চিকিৎসাধীন। বুধবার সকালে নতুন ডেঙ্গু ওয়ার্ডে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের রাখা হয়েছে মেঝেতে। রোগীর সঙ্গে স্বজনদের ভিড়ের কারণে ওয়ার্ডগুলোতে হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। নোংরা-অপরিচ্ছন্ন-দুর্গন্ধে অসহনীয় অবস্থা ওয়ার্ডগুলোতে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা যাবতীয় সব কিছু বাইরে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক থেকে করাতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। গ্যাস্ট্রিক আর জ্বরের ওষুধ ব্যতীত অন্য ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয় অভিযোগ রোগীদের। খাবার মানও যাচ্ছেতাই দাবি তাদের। রোগীদের মশারি দেওয়া হলেও তাদের অনেকেই ব্যবহার করেন না।
তাদের দাবি, ওয়ার্ডগুলোতে তেমন বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা নেই। ভ্যাপসা গরম। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ওয়ার্ডে মশারির মধ্যে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। এদিকে রোগীরা মশারি ব্যবহার না করায় স্বজনসহ ওই ভবনে চিকিৎসাধীন মেডিসিন বিভাগের অন্য রোগীরা রয়েছেন চরম ঝুঁকিতে।
এদিকে গুরুতর ডেঙ্গু রোগী অর্থাৎ যাদের রক্তের প্লাটিলেট ভেঙে যায় তাদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি শের-ই বাংলা মেডিকেলে। এ কারণে রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হলেই ঢাকায় প্রেরণ করেন তারা।
সরকারি এই হাসপাতালে সুচিকিৎসার দাবিতে গত সোমবার হাসপাতালে চত্বরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মানববন্ধনে মানবাধিকার কর্মী কাজী মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, শেবাচিমে সব ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। কিন্তু রোগী পরীক্ষা ও চিকিৎসার অনেক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। এ কারণে অনেক রোগীকে ঢাকায় প্রেরণ করেন চিকিৎসকরা। নিজ এলাকায় চিকিৎসা না পেয়ে ঢাকায় গিয়ে অসহায় দরিদ্র রোগীদের পক্ষে চিকিৎসা নেওয়া দুরূহ হয়ে পরে।
চিকিৎসা সংকট এবং রোগীদের নানা অভাব-অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতলের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্ধিত আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওই ভবনের নিচ তলায় পুরুষ এবং নারীদের জন্য আরও দুটি বড় কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপরের তলায় রোগীর স্থান সংকুলান না হলে নিচ তলায়ও ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হবে।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র। যন্ত্রটি চেয়ে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপার্টমেন্টে (সিএমএসডি) এই মুহূর্তে যন্ত্রটির সাপ্লাই নেই। আপাতত ‘সেল সেপারেটর’ পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন রোগী থাকায় তারা একদিকে নোংরা করে, আরেক দিকে পরিষ্কার করে কর্মীরা। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানান পরিচালক।