দেশের তথ্য ডেস্ক সৌদি প্রতিনিধি :- হিজরি নববর্ষের প্রথম রাতে পবিত্র কাবাঘর নতুন গিলাফ দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ১৪৪৫ হিজরি সন শুরু হয়। তাই সেই দিন দিবাগত রাতে পবিত্র কাবাঘরের পুরনো গিলাফ খুলে নতুন গিলাফ মোড়ানো হয়। মূলত হাজার বছর ধরে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ গিলাফ পরিবর্তনের রীতি থাকলেও ২০২২ সাল থেকে এতে পরিবর্তন আনে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
হিজরি নববর্ষকে স্মরণীয় রাখতেই ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রতিবছরের নতুন গিলাফ তৈরির জন্য আছে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। মক্কার উম্মুল জাওদে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা’স কিসওয়াহ’। ১৯২৮ সালে সৌদির প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন আবদুর রহমান আলে সৌদ গিলাফ তৈরির একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের নির্দেশ দেন।
২০১৭ সালে বাদশাহ সালমানের নির্দেশনায় এর নাম দেওয়া হয় ‘দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা’স কিসওয়া’। www.my.gov.sa সাইটে নিবন্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনের সুুযোগ রয়েছে। এ জন্য অন্তত ২০ থেকে ১০০ জনের একটি দলের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। এবং ওমরাহ বা হজযাত্রী অথবা কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কোনো প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।
৬৫৮ বর্গমিটারের গিলাফটি তৈরিতে ৬৭০ কেজি কালো রেশম ব্যবহার করা হয়। ৪৭টি কাপড়ের টুকরা দিয়ে পুরো গিলাফ সেলাই করা হয়। ১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেলাই মেশিনে করা হয় এসব কাজ। কারুকার্যের অনেক কাজ হাতেও করা হয়। কাপড়ের ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি অংশ একত্রে সেলাই করা হয় এবং তামার রিং দিয়ে গোড়ায় স্থির করা হয়।
২১ ক্যারেটের ১২০ কেজি স্বর্ণ ও ১০০ কেজি রুপার সুতা দিয়ে সেই কাপড়ে লেখা হয় পবিত্র কোরআনের আয়াত ও আল্লাহর গুণবাচক নাম। গিলাফের সব কাজ শেষ করতে ছয় থেকে আট মাস সময় লাগে। সব মিলিয়ে ৮৫০ কেজি ওজনের এই গিলাফ তৈরিতে ব্যয় হয় ২৫ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা সাড়ে ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই গিলাফকে বিশ্বের ব্যয়বহুল কাপড় বলে মনে করা হয়।
মূলত প্রায় ১০টি ধাপ পেরিয়ে গিলাফটি প্রস্তুত করা হয়। প্রথমত রেশম বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার পানিতে রেশমগুলো ধোয়ার পর নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণ করে সুমিষ্ট পানিতে পুনরায় পরিশোধন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে উচ্চ তাপমাত্রায় রেখে রেশমের ওপর থেকে মোমের স্তর সেরিসিন দূর করা হয়। এর পর বাইরে কালো ও ভেতরে সবুজ রং করে রঙিন রেশম শুকানো হয়। তৃতীয় ধাপে রেশমগুলো রং করার আগে ও পরে এর কিছু নমুনার ক্ষয়রোধ নিশ্চিত করতে পরীক্ষা করা হয়। চতুর্থ ধাপে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিনে প্রতি মিটার রেশমে ৯ হাজার ৯ শয়ের বেশি সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়। এরপর তাতে স্বর্ণ ও রৌপ্যের প্রলেপ দেওয়া সুতা দিয়ে পবিত্র কোরআনের কিছু আয়াত লেখা হয়। অতঃপর হাতে বিভিন্ন ইসলামী সাজ এঁকে তা সেলাই করা হয়। আর চূড়ান্ত পর্যায়ে কাবাঘরের পুরনো গিলাফ সরিয়ে নতুন গিলাফ লাগানো হয়।