আ’লীগ রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া,হিরো আলমকেও সহ্য করতে পারছে না বলেছেন মির্জা ফখরুল

mirja.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক খুলনা প্রতিনিধি :-  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ডেঙ্গুতে দেশে ৭৬ জন মানুষ মারা গেছে, আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবার নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে গেছেন। ঢাকার মেয়র তাপস সপরিবারে বিদেশ সফর করছেন। দেশের হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্য সেবা নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাসীদের আখড়া হয়ে গেছে। চাকুরি পায় কারা, আ’লীগের লোকজন। বিএনপি’র নাম-গন্ধ থাকলে তাদের সরকারি চাকুরি হয় না। খুলনার জুটমিলগুলো সব বন্ধ করে দিয়েছে; ওরা বলেছিল- ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে; এখন চালের কেজি ৯০ টাকা। অন্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নয়। নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। ন্যাড়া বারবার বেল তলায় যায় না, একবারই যায়। শিয়ালের কাছে কেউ মুরগি বর্গা দেয় না।
গতকাল সোমবার বিকেলে নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে অনুষ্ঠিত খুলনা বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আ’লীগ রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা হিরো আলমকে পর্যন্ত সহ্য করতে পারছে না। আজ হিরো আলম ভোটকেন্দ্রে গেলে তাকে আ’লীগের নেতা-কর্মীরা তাকে বের করে দেয় এবং মাটিতে ফেলে মারধর করেছে। চলমান আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপি’র ১৭ জন শহিদ হয়েছেন উলে­খ করে তিনি আরও বলেন, আ’লীগ সরকারের শাসনামলে বিএনপি অন্তত ছয়শ’ নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ৩৪টি রাজনৈতিক দলের সাথে এ সরকার পতন আন্দোলনের ঐক্যমত হয়েছে। অচিরেই দুর্বার আন্দোলনের ডাক আসবে। তরুণ প্রজন্মকে সেই আন্দোলনে রাজপথে নামার আহŸান জানিয়ে তিনি যোগ করেন, আমরা বলেছি শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে শেষ করে দিয়েছে। দয়া করে সময় নষ্ট না করে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন হবে না। যারা হিরো আলমকে কোন রকম প্রটেকশন দিতে পারে না। এদেরকে দিয়ে কোন নির্বাচন হবে না। তাই আমরা বলেছি-নির্বাচন কমিশন বদলাতে হবে। যারা যোগ্য তাদেরকে আনতে হবে। নতুন একটা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নতুন পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে। সমস্ত দলগুলোর সাথে আলাপ করে একটা জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করে সেটাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। সুতরাং দফা এক, দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ।

সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। তারা জোর করে আছে। তারা নির্যাতন-নিপীড়ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। ৪ কোটি ৭০ লাখ ভোটারের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে সরকার। আমরা তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। সমাবেশে তিনি তরুণদের শপথ পাঠ করান।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, তরুণরা ১৪ বছর ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তরুণদের ভোটের অধিকার, চাকুরির বৈষম্য দূরীকরণের জন্য এই সমাবেশ। তরুণ সমাজ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে তাদের অধিকার আদায় করবে। শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘আজকের তারুণ্য সেই ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের তারুণ্য। সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার তারুণ্য। এই তারুণ্যই আজ ভোটাধিকার বঞ্চিত। অথচ এই তারুণ্য মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ক্লাস, থিসিস না করে মিছিলে মিছিলে রাজপথ কাঁপিয়েছে, সোনালী দিনগুলো কারাগারে কাটিয়েছে। এই তারুণ্যও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।’
সভাপতির বক্তব্যে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন বলেন, শেখ হাসিনা সরকারকে হলুদ কার্ড দেখানোর জন্য এই সমাবেশ। তরুণ সমাজকে নিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাবো। সরকারের পতনের মধ্যদিয়ে সকল নেতা-কর্মীর হত্যার বিচার করা হবে।
তারুণ্যের সমাবেশে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে চাকুরি বঞ্চিত, খুন, গুম ও নির্যাতনের শিকার দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বজনদের মধ্যে বক্তৃতা করেন চাকুরি বঞ্চিত যুবক সরদার রিয়াজ উদ্দিন, নির্যাতিত ইউপি সদস্য আবুল কাশেম, ২২ অক্টোবর সন্ত্রাসী হামলা নিহত ফুলতলার সাজাদুজ্জামান জিকুর কন্যা সানজিদা আক্তার তোহা, বাগেরহাটের নূরে আলম তানু ভূঁইয়ার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ঝিনাইদহে ১৩ জুলাই দু’হাতের কব্জি কর্তনের শিকার লিটন মন্ডলের স্ত্রী শাপলা খাতুন, গুমের পর হত্যার শিকার যশোরের নাজমুল ইসলামের স্ত্রী সাবেরা নাজমুন মুন্নী, পুলিশের গুলিতে নিহত শহিদ মামুন গাজীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম; আর প্রতিবাদী কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মোঃ সোহেল হোসেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী।
যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নগর আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা, জেলা আহবায়ক আমীর এজাজ খান প্রমুখ। শুরুতেই কোরআন তেলোয়াত করে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু এবং আন্দোলন-সংগ্রামে হতাহত নেতা-কর্মীদের জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন এস এম মুসা।
এছাড়া সমাবেশস্থলে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, এড. নিতাই রায় চৌধুরী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলার সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক ও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবাদুল হক রুবায়েদ প্রমুখ।

Share this post

PinIt
scroll to top