পৃথক নীতি ও বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন চরের উন্নয়নে

chorar.webp

দেশের তথ্য ডেস্ক:-  চরাঞ্চলের উর্বর কৃষিজমিতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চরের জন্য সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প, আলাদা বাজেট বরাদ্দ ও জাতীয় চর নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন। তাহলেই চরের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়ন হবে। চরের বিশাল জমিতে যদি পরিকল্পিতভাবে ফসল আবাদ করা যায় তাহলে দেশে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ফসল বেশি উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলহ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চরের জীবিকা উন্নয়নে আলাদা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার। চরাঞ্চলের উন্নয়নে চর ফাউন্ডেশন গঠন করা যেতে পারে। সরকার চরাঞ্চলে বিনিয়োগ করলে একদিকে কৃষি উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।’

চরাঞ্চল নিয়ে কাজ করা গবেষকরা বলছেন, দেশের চরাঞ্চলগুলোতে কী পরিমাণ জমি রয়েছে সেটার কোনো সঠিক তথ্য নেই।

তবে চরাঞ্চলে তিন লাখ একর আবাদি জমি রয়েছে। তার মধ্যে দুই লাখ একর জমি ব্যবহার হচ্ছে। বাকি এক লাখ একর আবাদি জমি ব্যবহার হচ্ছে না। এই জমিগুলোতে ফসল আবাদ করা গেলে একদিকে বাড়বে উৎপাদন, অন্যদিকে কমবে খাদ্য আমদানিনির্ভরতা।

কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে চরাঞ্চলের উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। চরাঞ্চলগুলোতে ৮০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। চরের জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব না। এ কারণে সরকারকে এখনই চরের উন্নয়নে বিশেষ নজর দিতে হবে।

ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, ‘চরের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার।

চরের কৃষি নিয়ে বিশেষ একটি গবেষণা প্রয়োজন। যাতে সরকার এখান থেকে একটি তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যমুনা, পদ্মা, তিস্তা, ধরলায় দ্বীপচর এলাকা তুলনামূলক বেশি। উপকূলীয় এলাকায়ও অনেক দ্বীপচর রয়েছে। চরে যেমন হাজারো সমস্যা রয়েছে, তেমনি রয়েছে সম্ভাবনার শত দুয়ার। চরের কৃষিজমিতে বেশি উৎপাদন করতে হলে প্রথমেই চরের কৃষককে বিভিন্ন ধরনের কৃষি সহায়তা, প্রশিক্ষণ, কৃষিপ্রযুক্তি প্রদানের বিকল্প নেই। কৃষির পাশাপাশি চর এলাকা গবাদি পশু পালনের জন্যও সবচেয়ে ভালো জায়গা। সারা দেশের তুলনায় চরাঞ্চলে উন্নয়নের সুবাতাস সেই অর্থে অনুপস্থিত।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চরের উন্নয়নে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের বিপুল চরাঞ্চলগুলোকে আবাদে নিয়ে আসার। চরের সমস্যাগুলো নিরসন করা গেলে দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে।’

এদিকে চরাঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজারজাত সহজলভ্য করার পাশাপাশি কৃষির মান উন্নয়নে কৃষকদের সহযোগিতায় সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ সরকার যৌথ উদ্যোগে কাজ করছে। ‘মেকিং মার্কেটস ওয়ার্ক ফর দ্য চরস (এমফোরসি)’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে শরীয়তপুর, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও জামালপুরের যমুনা তীরের চরাঞ্চলে। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের দ্বিতীয় মেয়াদ ২০২৪ সালে শেষ হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সুইস কনটাক্ট ও বগুড়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)।

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চরবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকার এমফোরসি প্রকল্পের আওতায় কাজ শুরু করার পর ভুট্টা, ধান, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। উচ্চ ফলনশীল বীজ ও আধুনিক উপায়ে চাষাবাদে চরের মানুষের জীবন পরিবর্তন হচ্ছে।

এমফোরসির টিম লিডার আব্দুল আউয়াল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চরের উন্নয়নে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো প্রকল্প নেই। যেসব প্রকল্প চলছে সবই বিচ্ছিন্নভাবে কাজ হচ্ছে। তাই চরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত কার্যক্রম নেওয়া উচিত। এ জন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে। পাশাপাশি বাজেট বরাদ্দও দিতে হবে সরকারকে। তাহলেই চরের উন্নয়ন হবে।

Share this post

PinIt
scroll to top