দেশের তথ্য ডেস্ক:-
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে যে বিশেষ প্রণোদনা পাবেন, তা সর্বনিম্ন বেতন এক হাজার টাকার কম বাড়ছে। মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনায় দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ার কথা ছিল ৪১২ থেকে ৮০০ টাকা। বেতন বাড়ার এই হার কম হওয়ায় সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এসংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ২০১৩ সালে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা কার্যকরের সময় কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি কম হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেতন কমিয়ে কর্মচারীদের বাড়ানো হয়। তখন সর্বনিম্ন এক হাজার ৫০০ এবং সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে হিসাবে এবার সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ। তবে সর্বোচ্চ বেতন নির্ধারণের বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।
সরকারি প্রকল্প ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং পেনশনভোগীদেরও বেতন-ভাতা বাড়বে। শুধু চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য নয়, পরের অর্থবছরগুলোতেও এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাড়তি প্রণোদনার টাকা বেতনের সঙ্গে প্রতি মাসে পাবেন। এসংক্রান্ত সব বিষয় স্পষ্ট করতে অর্থ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে অনুমোদন দিলে অর্থ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। যখনই প্রজ্ঞাপন জারি হোক, সরকারি কর্মীরা বাড়তি প্রণোদনা জুলাই মাস থেকেই পাবেন। এ জন্য চাকরি (বেতন-ভাতাদি) আদেশ-২০১৫ সংশোধন করা হবে।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রবিধি, বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান) মো. গোলাম মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আশা করি চলতি মাসেই এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা যাবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রণোদনা মানে এক প্রকার ইনসেনটিভ। উনি বলেননি আরেকটি বেতন বৃদ্ধির ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এটি শুধু এ বছর বাড়বে।
বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ৫ শতাংশ প্রণোদনার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা সার্বিক মূল্যস্ফীতির তুলনায় অনেক কম, যা বর্তমান বাজারদরকে আরো প্রভাবিত করবে। একাদশ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন ২০ শতাংশ বাড়ানো দরকার।
২০২৩-২৪ সালের বাজেট সংক্ষিপ্তসার অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট ৮১ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা।
বর্তমান বাজারের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করতে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও মহার্ঘ ভাতা চালুকালীন অর্থসচিব ফজলে কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০১৩ সালে মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়নের সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তুলনায় নিম্নস্তরের কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি কম হচ্ছিল। তখন নিচের গ্রেডে বেতন বাড়িয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেতন কমানো হয়েছিল।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির (১৩ থেকে ২০ গ্রেড) কর্মচারীদের মূল বেতন আট হাজার ২৫০ থেকে ১১ হাজার টাকা। ৫ শতাংশ বিশেষ এই প্রণোদনার ফলে তাঁদের বেতন বাড়ার কথা ৪১২ থেকে ৫৫০ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণির (১০ থেকে ১২ গ্রেড) কর্মকর্তাদের বেতন ৫৬৫ থেকে ৮০০ টাকা। প্রথম শ্রেণির (প্রথম থেকে নবম গ্রেড) কর্মকর্তাদের বেতন এক হাজার ১০০ থেকে তিন হাজার ৯০০ টাকা। মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব ও সমমর্যাদার সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা। সে হিসাবে তাঁরা প্রণোদনা পাবেন চার হাজার ৩০০ টাকা বেশি। আর সিনিয়র সচিব ও সমমর্যাদার সরকারি কর্মচারীরা নির্ধারিত ৮২ হাজার টাকার ভিত্তিতে প্রণোদনা পাবেন চার হাজার ১০০ টাকা বেশি। ভাতা বৃদ্ধির হার কম হওয়ায় তা সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা করা হচ্ছে।