এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিজেদের করে নিল আফগানিস্তান

দেশের তথ্য ডেস্ক:  উইকেটে ঘাসের ছোঁয়া দেখে টস জিতে বোলিং নিলেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু বোলাররা সুবিধা নিতে পারলেন না। শুরুতে খানিকটা দেখেশুনে খেলে বড় জুটি গড়লেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। আফগানিস্তান পেয়ে গেল বড় সংগ্রহ। পরে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় যা টপকানোর কোনো সম্ভাবনাও জাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শনিবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৪২ রানে জিতেছে আফগানিস্তান। ৩৩২ রানের লক্ষ্যে ১৮৯ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা। পেশির টানে ইবাদত হোসেন চৌধুরি ব্যাটিং করতে না পারায় ৯ উইকেট পড়ার পরই শেষ হয় ইনিংস।ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। আগের বড় জয় ছিল ১৩৬ রানে, ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে। সব মিলিয়ে তাদের বড় জয় আছে আর দুটি।

রেকর্ড গড়া এই জয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবার এর আগের দুই সিরিজেই ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল তারা। আফগানদের সিরিজ নিশ্চিত করার ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন গুরবাজ ও ইব্রাহিম। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ১৪৫ রান করেন গুরবাজ। ১২৪ বলে ১৩ চার ও ৮ ছক্কার ইনিংসে জেতেন ম্যাচ সেরা পুরস্কার। ইব্রাহিম করেন ১০০ রান। উদ্বোধনী জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেন ২৫৬ রান। এই সংস্করণে এটিই সবচেয়ে বড় জুটি আফগানিস্তানের।ব্যাটিংয়ে নেমে উইকেটের ব্যাটিং সহায়ক আচরণ বুঝতে স্রেফ ৪ বল লাগে গুরবাজের। সবগুলো ডেলিভারি ফুল লেংথে করেন মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু উইকেট থেকে পাননি কোনো সুইং। তবু দেখেশুনে রক্ষণাত্মকভাবেই খেলেন গুরবাজ।

একই লেংথের পঞ্চম বলে আর নিজেকে সংবরণ করেননি আফগান ওপেনার। দারুণ ড্রাইভে মিড অফ ফিল্ডারকে দর্শক বানিয়ে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন কিপার-ব্যাটসম্যান। আফগানিস্তানের কাজ আরও সহজ হয় বাংলাদেশের এলোমেলো বোলিংয়ে। পাওয়ার প্লেতেই ১৬ রান আসে অতিরিক্ত থেকে। অষ্টম ওভারে মুস্তাফিজকে জোড়া ছক্কা মারেন গুরবাজ। এরপর আর থামাথামি নেই। উইকেটের চারপাশে বাহারি সব শটে নিজের ইনিংস এগিয়ে নেন তিনি। ৪৮ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ঠিক ১০০ বলে। ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক পূরণের পর আরও রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন তিনি। পরের ২৪ বলে নেন ৪৫ রান। অন্যপ্রান্তে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন ইব্রাহিম। পঞ্চাশ ছুঁতে তার লাগে ৭৫ বল।

দুজনের জুটিতে ৩৬ ওভারেই আড়াইশ পেরিয়ে যায় আফগানরা। এরপরই বল হাতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শেষ ১৪ ওভারে আফগানিস্তান হারায় ৯ উইকেট। বিপরীতে স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৭৫ রান।
সাকিব আল হাসানের বলে এলবিডব্লিউ হন গুরবাজ। অল্পেই ফেরেন রহমত শাহ ও হাশমতউল্লাহ শাহিদি। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন নাজিবউল্লাহ জাদরান। সতীর্থরা দ্রুত ফিরে গেলেও একপ্রান্ত ধরে রেখে ১১৮ বলে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ইব্রাহিম। তবে ১৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে চতুর্থবার শতরান ছোঁয়া ইনিংসকে বড় করতে পারেননি তিনি। পরের বলেই তিনি ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ।শেষ দিকে আফগানিস্তানের থমকে আসে রানের পালে হাওয়া দেন মোহাম্মদ নবি। তার ১৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংসে ৩৩২ পর্যন্ত যায় সফরকারীরা। ওয়ানডেতে তাদের এর চেয়ে বড় স্কোর আছে আর স্রেফ দুটি। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন সাকিব, মিরাজ, মুস্তাফিজ, হাসান।

রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জে রান তাড়ায় একবারের জন্যও জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম পাওয়ার প্লেতেই ড্রেসিং রুমে ফেরেন তিন টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান লিটন, নাঈম শেখ ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
প্রায় দুই বছর পর ওয়ানডে খেলতে নেমে নড়বড়ে ব্যাটিং করেন নাঈম। ফজলহক ফারুকির খাটো লেংথের ডেলিভারি কাট করতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে আউট হন ২১ বলে ৯ রান করে। ৩ চারে লিটন করেন ১৩ রান। শান্তর ব্যাট থেকে আসে স্রেফ ১।
প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৪০ রান যোগ করেন তাওহিদ হৃদয় ও সাকিব। রশিদের গুগলিতে বোল্ড হন ৩৪ বলে ১৬ রান করা হৃদয়। পরপর আউট হন সাকিব, আফিফ হোসেনও। সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ২৫ রান। এক সিরিজ পর স্কোয়াডে ফেরা আফিফ এই ম্যাচে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। আগের ম্যাচে তিনি আউট হন ৪ রান করে। স্রেফ ৭২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে যায় বাংলাদেশ।সপ্তম উইকেটে ৮৭ রানের জুটি গড়ে দলকে দেড়শ পার করান মুশফিকুর রহিম ও মিরাজ। মুজিব উর রহমানের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ৪৮ বলে ২৫ রান করা মিরাজ।
এরপর নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত ৬ চারে ৬৯ রান করে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। সমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশের ইনিংসের। আফগানিস্তানের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন ফারুকি ও মুজিব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান: ৫০ওভারে ৩৩১/৯ (গুরবাজ ১৪৫, ইব্রাহিম ১০০, রহমত ২, শাহিদি ২, নাজিবউল্লাহ ১০, নবি ২৫*, রশিদ ৬, ওমারজাই ২, মুজিব ৫, ফারুকি ১; মুস্তাফিজ ১০-০-৬০-২, হাসান ১০-০-৭০-২, ইবাদত ৯.২-০-৬১-১, সাকিব ১০-২-৫০-২, মিরাজ ৯-০-৬০-২, শান্ত ১.৪-০-১৭-০)

বাংলাদেশ: ৪৩.২ ওভারে ১৮৯ (নাঈম ৯, লিটন ১৩, শান্ত ১, হৃদয় ১৩, সাকিব ২৫, মুশফিক ৬৯, আফিফ ০, মিরাজ ২৫, হাসান ৪, মুস্তাফিজ ৭*, ইবাদত (আহত অনুপস্থিত) ; ফারুকি ৭.১-২-২২-৩, মুজিব ১০-০-৪০-৩, সালিম ৬-০-৩৪-০, নবি ৬-০-২৯-১, রশিদ ৯-০-২৮-১, ওমারজাই ৫-০-৩০-২)

ফল: আফগানিস্তান ১৪২ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে আফগানিস্তান ২-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: রহমানউল্লাহ গুরবাজ

 

Share this post

PinIt
scroll to top