রাজধানীতে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি চলছেই। ভারি বৃষ্টিপাত হলেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে যায়। গত বৃহস্পতিবার ঈদের দিন থেকে শনিবার পর্যন্ত এই ভোগান্তি প্রকট হয়ে ওঠে। এদিন দুপুরের পর শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিতে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, বেগম রোকেয়া সরণি, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, ভাসানটেক, কল্যাণপুর, কারওয়ান বাজার, নাখালপাড়া, ইব্রাহিমপুর, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বেশ কয়েকটি এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়।দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায়ও দীর্ঘ সময় একই অবস্থা ছিল। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেট কারের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় অনেক সড়কে। তবে রাত ৯টার দিকে বেশির ভাগ এলাকার রাস্তা থেকে পানি সরে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
নগর বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সড়ক ও নর্দমার উন্নয়নকাজে দুই সিটি করপোরেশন প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করে।দেখা যায়, যে পথ বা নালা দিয়ে পানি নদীতে বা খালে গিয়ে পড়বে সে কাজ না করে বিভিন্ন এলাকার পানির সংযোগ লাইনের কাজ হচ্ছে। এতে অর্থ ব্যয় হলেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের পর খাল থেকে বর্জ্য অপসারণ, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হলেও তা এখনো অসমাপ্ত। এসব কারণে বৃষ্টিতে জমা পানি দ্রুত সরে যাওয়ার পথ পাচ্ছে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ও ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পানি কোন পথ দিয়ে নামবে, সেই কাজ আগে করা উচিত ছিল। তা না করে শুধু সংযোগ লাইনের কাজ করলে কি পরিবর্তন আসবে? লাইনের পানি সরার জায়গা তো আগে ঠিক করতে হবে। ঢাকাবাসীর ভোগান্তি কমাতে পরিকল্পিত এবং যথাযথ উন্নয়ন না করলে কোনো ক্ষেত্রেই সুফল পাওয়া যাবে না। কোন কাজটি আগে করা উচিত, আর কোনটি পরে সেটি যদি চিহ্নিত না করা হয় সেই ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় হলেও নগরবাসী ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে না।
তিনি আরো বলেন, ‘জলাবদ্ধতার ভোগান্তি দীর্ঘদিনের।নালা সংযোগ ব্যবস্থার মহাপরিকল্পনা তৈরি না করে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করা হলে তা হবে শুধুই টাকার অপচয়। পুরান ঢাকার ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। এই অপচয় বন্ধে দ্রুত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন শেষ করে সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।’