Dhaka 12:35 am, Saturday, 5 July 2025

সুইসাইড নোটে চাঞ্চল্যকর তথ্য রেখে গেলেন সেই সোহা, যাওয়া হলো না স্বামীর কাছে

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনা। স্বামীর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করতে প্রস্তুত সুলতানা পারভীন ওরফে সোহা, মাত্র ২৩ বছর বয়সে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তবে এটি আত্মহত্যা না-কি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড — এমন প্রশ্ন তুলছে পরিবার।

রোববার দুপুরে আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। তার স্বজনদের দাবি, একটি ডিপফেইক ভিডিওই এই ট্র্যাজেডির মূল কারণ।

সুলতানার পরিবার জানায়, ১০ মাস আগে তার বিয়ে হয় জাপানপ্রবাসী আশরাফুল ইসলাম অনিকের সঙ্গে। বিয়ের পর শুরু হয় ভালোবাসায় ভরা সংসার। অনিক স্ত্রীর ভিসার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে জাপানে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক তখনই নেমে আসে অমানিশার ছায়া।

পরিবারের অভিযোগ, অনিকের বোন জামাই, পর্তুগালপ্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুল, এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। অনিককে অন্যত্র বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। এজন্য নাহিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে সুলতানার ছবি দিয়ে তৈরি করেন একটি আপত্তিকর ডিপফেইক ভিডিও। পরবর্তীতে সেটি একটি ফেইক আইডি থেকে সুলতানাকে ও তার স্বামী অনিককে পাঠানো হয়।

সুলতানার ভাই আলিমুল ইসলাম, যিনি নৌবাহিনীর কোস্টগার্ডে কর্মরত, বলেন, “এই ভিডিও দেখে সংসারে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হয়। বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। পরে জানা যায়, ভিডিওটি ভুয়া, আর এর পেছনে নাহিন শেখের হাত রয়েছে। কিন্তু ততদিনে সব শেষ।”

আত্মহত্যার আগে সুলতানা তিন পাতার সুইসাইড নোট লিখে যান, যেখানে স্পষ্টভাবে নাহিন শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিচার দাবি করেন।

মা ফিরোজা বেগম সন্তানের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। বিলাপ করে তিনি বলেন, “আমার মেয়েকে ওরা শেষ করে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।”

অন্যদিকে স্বামী অনিক বলেন, “আমি তাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছি। সব প্রস্তুতি ছিল জাপানে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু আমার বোন জামাই এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি, সে-ই সব করেছে। আমি আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নাহিন শেখের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

আদিতমারী থানার ওসি আলী আকবর জানান, “এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (ইউডি) হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি।”

সুলতানার অকালমৃত্যু এলাকায় শোকের ছায়া নামিয়ে এনেছে। পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, শুধুমাত্র ভিডিও নয়, এটি এক নারীর স্বপ্ন ও জীবন নির্মমভাবে ধ্বংসের একটি চিত্র। তারা দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

খুলনায় খানজাহান আলী থানা শ্রমিক দলের কমিটি গঠন

সুইসাইড নোটে চাঞ্চল্যকর তথ্য রেখে গেলেন সেই সোহা, যাওয়া হলো না স্বামীর কাছে

প্রকাশঃ 07:50:14 am, Thursday, 10 April 2025

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনা। স্বামীর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করতে প্রস্তুত সুলতানা পারভীন ওরফে সোহা, মাত্র ২৩ বছর বয়সে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তবে এটি আত্মহত্যা না-কি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড — এমন প্রশ্ন তুলছে পরিবার।

রোববার দুপুরে আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। তার স্বজনদের দাবি, একটি ডিপফেইক ভিডিওই এই ট্র্যাজেডির মূল কারণ।

সুলতানার পরিবার জানায়, ১০ মাস আগে তার বিয়ে হয় জাপানপ্রবাসী আশরাফুল ইসলাম অনিকের সঙ্গে। বিয়ের পর শুরু হয় ভালোবাসায় ভরা সংসার। অনিক স্ত্রীর ভিসার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে জাপানে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক তখনই নেমে আসে অমানিশার ছায়া।

পরিবারের অভিযোগ, অনিকের বোন জামাই, পর্তুগালপ্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুল, এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। অনিককে অন্যত্র বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। এজন্য নাহিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে সুলতানার ছবি দিয়ে তৈরি করেন একটি আপত্তিকর ডিপফেইক ভিডিও। পরবর্তীতে সেটি একটি ফেইক আইডি থেকে সুলতানাকে ও তার স্বামী অনিককে পাঠানো হয়।

সুলতানার ভাই আলিমুল ইসলাম, যিনি নৌবাহিনীর কোস্টগার্ডে কর্মরত, বলেন, “এই ভিডিও দেখে সংসারে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হয়। বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। পরে জানা যায়, ভিডিওটি ভুয়া, আর এর পেছনে নাহিন শেখের হাত রয়েছে। কিন্তু ততদিনে সব শেষ।”

আত্মহত্যার আগে সুলতানা তিন পাতার সুইসাইড নোট লিখে যান, যেখানে স্পষ্টভাবে নাহিন শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিচার দাবি করেন।

মা ফিরোজা বেগম সন্তানের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। বিলাপ করে তিনি বলেন, “আমার মেয়েকে ওরা শেষ করে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।”

অন্যদিকে স্বামী অনিক বলেন, “আমি তাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছি। সব প্রস্তুতি ছিল জাপানে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু আমার বোন জামাই এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি, সে-ই সব করেছে। আমি আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নাহিন শেখের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

আদিতমারী থানার ওসি আলী আকবর জানান, “এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (ইউডি) হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি।”

সুলতানার অকালমৃত্যু এলাকায় শোকের ছায়া নামিয়ে এনেছে। পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, শুধুমাত্র ভিডিও নয়, এটি এক নারীর স্বপ্ন ও জীবন নির্মমভাবে ধ্বংসের একটি চিত্র। তারা দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।