মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের একটি বাঁশঝাড় থেকে উদ্ধার হওয়া নারীর কার্টনবন্দি মরদেহের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। স্ত্রীকে হ”ত্যা’ করে মর’দে’হ কার্টনে ভরে অন্যত্র ‘ফেলে দেন স্বামী অলোক রঞ্জন গোস্বামী (৩৯)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও অনলাইনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করায় স্ত্রীকে হত্যা করেছেন বলে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
আটক অলোক রঞ্জন গোস্বামী মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তরা গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ঢাকার উত্তরায় একটি বায়িং হাউসে চাকরি করতেন। স্ত্রী বিউটি গোস্বামী (৩৮) ও দুই সন্তান নিয়ে তারা উত্তরা এলাকায় বসবাস করতেন।
গত ৪ এপ্রিল মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার এগারশ্রী এলাকার মিতরা-বরুন্ডি সড়কের পাশে একটি বাঁশঝাড় থেকে কার্টনবন্দি এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে মরদেহের পরিচয় জানা না গেলেও, পরে পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিট ও সিআইডির সহায়তায় ভিকটিমের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। নিহত বিউটি গোস্বামীর গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলায়।
এ ঘটনায় পরদিন নিহত গৃহবধূর বাবা নিহার রঞ্জন গোস্বামী অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এরপর ৬ এপ্রিল ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকা থেকে অলোক রঞ্জনকে আটক করে পুলিশ।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে অলোক জানান, তার স্ত্রী ফেসবুক, অনলাইন ব্যবসা ও লাইভ ভিডিও নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকতেন যে, দুই সন্তানকেও সময় দিতেন না। এই নিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। এমনকি তারা আলাদা ঘরে ঘুমাতেন। গত ২ এপ্রিল রাতে আবারও ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রী রান্নাঘরে গেলে পেছন থেকে মুখ ও গলা চেপে ধরেন অলোক। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে বিউটি মেঝেতে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান এবং রক্তক্ষরণ হয়। পরে স্ত্রী মারা গেলে মরদেহ একটি এসির কার্টনে ভরে রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন তিনি।
পরদিন ৩ এপ্রিল ঈদ উপলক্ষে গ্রামে আত্মীয়দের উপহার দিতে যাচ্ছেন বলে পরিচিত একজনের সহায়তায় একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করে মরদেহ নিয়ে মানিকগঞ্জে যান। কার চালককে না জানিয়ে সহযোগীর সহায়তায় মরদেহ বাঁশঝাড়ে ফেলে দেন।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এসএম আমান উল্লাহ বলেন, “ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন অলোক রঞ্জন। আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলার আরেক আসামি, অলোকের সহযোগী এখনও পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।”